ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৫০ বছর ধরে চুরি করা জব্বার গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২২
৫০ বছর ধরে চুরি করা জব্বার গ্রেফতার

ঢাকা: বিগত ৫০ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি করে আসছেন মো. জব্বার। এর মধ্যে প্রথম ২৭ বছর ছোটখাটো চুরি করলেও বিগত ২৩ বছর বাসা-বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে বড় চুরি করে আসছিলেন তিনি।

গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার এক চিকিৎসকের বাসায় দলবল নিয়ে চুরি করে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪ হাজার ইউএস ডলার নিয়ে যায় জব্বার।

এ ঘটনায় ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত একটি মামলা হলে তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৮ অক্টোবর) মিরপুর পল্লবী এলাকার একটি বাসায় চুরি করার সময় হাতেনাতে চোর চক্রের চার সদস্য ও দুজন জুয়েলারি দোকানের মালিককে গ্রেফতার করে ডিবি গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- চোর চক্রের সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহ (৬৭), মো. জামাল সিকদার (৫২), মো. আবুল (৫১), আজিমুদ্দিন (৫২), টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪) ও তাঁতীবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আব্দুল ওহাব (৪৫)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৮২ ভরি রূপা, নগদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা, দরজা ভাঙার যন্ত্রপাতি ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত ১৭ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নম্বর রোডে চিকিৎসক দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় চুরি হয়। বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি না থাকার সুযোগে জব্বার ও তার চোর চক্রের সদস্যরা বাসায় প্রবেশ করে তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা আলমারির লক ভেঙে ভেতর থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও চার হাজার ইউএস ডলার চুরি করে। এ ঘটনায় ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় মামলা হলে তদন্তে নামে ডিবি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার চোর চক্রের চার সদস্যকে করে ডিবি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে দুই দোকানিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।  

ডিবিপ্রধান বলেন, চোর চক্রটির সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহর বয়স ৬৭ বছর। সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি, মাথায় টুপি এ বেশভূষাগুলোই এ চোর চক্রের প্রধান হাতিয়ার। চুরির আগে দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরা থাকায় কোনো অপরিচিত ভবনে উঠলেও প্রাথমিকভাবে কেউ তাদের সন্দেহ করতো না।

চুরির আগের দিন তারা রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ঘুরে সুবিধামতো একটি বাসা ঠিক করতো। যেসব বাসার দরজা লক করা থাকতো সেসব বাসা তারা টার্গেট করতো। পরে সেই বাসায় বিশেষভাবে তৈরি দেশীয় যন্ত্র দিয়ে দরজা ভেঙে চুরি করতো।

তিনি আরও বলেন, জব্বারসহ চক্রটির সদস্যরা ৮ থেকে ১০ বছর বয়সে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ সংসদ ভবনের আশপাশের এলাকায় টোকাইগিরি করতো। এ সময় তারা বাসা-বাড়ির ছাদে রোদে দেওয়া জামাকাপড়, জুতা, রড ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করতো।

চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তারা একত্রে চুরি করা শুরু করে। বিগত ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করে তারা।

চুরি করার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে কোথায় চুরি করবে, সে অনুযায়ী পরদিন সকাল বেলা তারা ওই এলাকায় হাজির হয়। একত্রে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকে এবং খেয়াল করে দেখে কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বাসা টার্গেটের পর দুজন বাসার ভেতরে প্রবেশ করে, বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকে।

১০ মিনিটের মধ্যে চুরি শেষ করে মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যায়। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করে। তারা শুধুমাত্র মূল্যবান সামগ্রী যেমন- অলঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা ও টাকা চুরি করে।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, চোরাই করা স্বর্ণালঙ্কার ঢাকার তাঁতীবাজারের দুটি দোকান এবং টঙ্গী বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় তারা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার জানান, তিনি প্রায় ২০০টি বাড়িতে এখন পর্যন্ত চুরি করেছেন। এ দীর্ঘ সময় বাসা-বাড়ি থেকে চুরি করা প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণ তিনি তাঁতীবাজার এলাকায় বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ২০০ ভরি স্বর্ণ তিনি টঙ্গীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করেছেন।

জব্বার মোল্লা চারটি বিয়ে করেছেন। চুরির টাকা দিয়ে তাদের সুন্দরভাবে ভরণ-পোষণ করেন। চুরির টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন তিনি।

বাংলদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২২
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।