ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গণপরিবহনে নারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে সিসিটিভি স্থাপন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
গণপরিবহনে নারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে সিসিটিভি স্থাপন

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন যাত্রীদের জন্যে নিরাপদ নয়। নারীদের জন্যে গণপরিবহন আরও অনিরাপদ এবং নারীরা গণপরিবহনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করেন না।

নারীদের জন্য গণপরিবহন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য আনতে গণপরিবহনে এবার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৯৯৯ ও ১০৯ এর মাধ্যমে নারীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। তারপর সিসিটিভির মাধ্যমে ফুটেজ সংগ্রহ করে বিচার নিশ্চিত করা হবে।  

মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ও দীপ্ত ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় গণপরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।  

রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

রাজধানীতে চলাচলকারী পরিস্থান পরিবহন, রাজধানী সুপার সার্ভিস, প্রজাপতি পরিবহন, বসুমতি পরিবহন ও গাবতলী এক্সপ্রেসের ১০০টি পরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক উন্নয়নে অংশীদার করতে ১৯৭৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে দুটি বাস সর্বপ্রথম নারীদের জন্যে চালু করা হয়। একটি বাস ইডেন কলেজ থেকে মতিঝিল ও অপরটি গাবতলী যেতো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। সে সময় উন্নয়ন কার্যক্রমে পুরুষের সমান অংশীদার হবে নারীরা। সেজন্য গণপরিবহনে নারীদের নিরপদ যাত্রা ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ আনতে ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সবাই সচেতন হবে, একইসাথে অপরাধীদের চিহ্নিত করা যাবে।

বাসে নারীদের হয়রানির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাসের সহকারীদের দ্বারা নারীরা যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছে, তেমনি পুরুষ যাত্রীদের দ্বারাও হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে।  

সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এদেশে বিএনপি-জামায়াতের সময় নারী ধর্ষণ-হত্যা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশে এসব ঘটনার বিচার করছেন। টাঙ্গাইলের রুপা ধর্ষণ মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইন ও নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে অনেকগুলো। আইনে ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।

চালক-সহকারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, নারী যাত্রীরা আপনাদের বোন-স্ত্রী-বন্ধু। আপনারা তাদের নির্যাতন করবেন না। বাস কোম্পানির মালিকেরা বাছাই করে ইন্টারভিউ নিয়ে চালক-সহকারী নিয়োগ দেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ৯৯৯ ও ১০৯ এর মাধ্যমে নারীরা অভিযোগ জানাতে পারবেন। তারপর সিসিটিভির মাধ্যমে ফুটেজ সংগ্রহ করে বিচার নিশ্চিত করা হবে।  

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব  হাসানুজ্জামান কল্লোলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র সহ- সভাপতি সফিকুল আলম।

দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান বলেন, গণপরিবহনে নারীদের যাতায়াত নিরাপদ ও উন্নত করতে আমরা এই প্রজেক্ট শুরু করেছি। এর ফলে মনিটরিং করতে সুবিধা হবে।  তিন বছরে আমাদের এই প্রজেক্টে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি তিন বছর মেয়াদি এ প্রজেক্টের কার্যক্রম শুরু হয়।

অতিরিক্ত সচিব ফেরদৌসী বেগম বলেন, ভারতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল এক তরুণী। আমরা ভেবেছিলাম ভারতে হয়েছে বাংলাদেশে হবে না, কিন্তু বাংলাদেশেও হয়েছে। তারপর গণপরিবহন নিরাপদ রাখতে আমরা উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছি। ১০০ বাসে যারা যাতায়াত করবেন নারী-শিশু-পুরুষ সবাই উপকৃত হবেন। পুলিশের জন্যে অপরাধী শনাক্তকরণে সহজ হবে।

উল্লেখ্য, রাজধানীতে প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

এর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বুলিং, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্য এবং ৮ দশমিক ২ শতাংশ বডি শেমিংয়ের মতো হয়রানির মধ্য দিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২২
এনবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।