ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তারেককে দেখার ইচ্ছাও নেই তথ্য সচিব মকবুলের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
তারেককে দেখার ইচ্ছাও নেই তথ্য সচিব মকবুলের

ঢাকা: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’র ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে। বিদায় নেওয়ার আগে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন তিনি।

জানান, বিএনপি ও সরকার বিরোধী কোনো কাজে তার কোনোরকম সম্পর্ক ছিল না।

তিনি আরও জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরাসরি কখনো দেখেননি, এবং তাকে দেখার কোনো ইচ্ছেও তার নেই। যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য পাওয়া যায়, সেটি সাংবাদিকরা প্রচার করতে পারবেন।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকরা মকবুল হোসেনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি লন্ডনে গিয়ে কারও সঙ্গে বৈঠক করেছেন; এমন একটি কথা চাউর হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদায়ী তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী আছেন, আমাদের প্রেস। তাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তারেক রহমানের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বলে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে; তা নিয়ে প্রশ্ন করলে মকবুল হোসেন বলেন, একটা কথা আছে, হাতি যখন পাকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে। আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তাকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।

এ সময়  যে সব অভিযোগ এসেছে সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ হলে প্রকাশ করার অনুরোধ করেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল; আমি যেখানেই থাকি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে, এটা হয় না। আমি জানি না কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো! কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণ কি হতে পারে এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে আপনার অনিয়মের বিষয়টি গণমাধ্যমের খবরে আছে জানিয়ে সচিব মকবুলকে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, আমার জানা মতে নেই। আমি যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সাথে করেছি, নিষ্ঠার সাথে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে; সেজন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।

অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান করতে পারেন। সরকার বিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কিনা? যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নাই।

এ ব্যাপারে নিজের বক্তব্য কি, প্রশ্ন করা হলে বাধ্যতামূলক অবসর পাওয়া সচিব বলেন, যোগাযোগ নিশ্চয়ই ছিল না। আমার আপন বড় ভাই আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। যদি ওখানকার এমপিকে জিজ্ঞেস করতেন, আমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি? তাহলে বেশি ভালো হতো। আমি হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিও ছিলাম।

একটা কথা শোনা যাচ্ছে। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আপনি অনেক কাজেই মন্ত্রীকে অবহিত করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সাথে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি।    দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি উনাকে সম্মান করি।

আমরা চেষ্টা করেছি, অফিস টাইমের পরও সরকারকে সহযোগিতা করতে। এ মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনো দিন নেই যে দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি। পথেঘাটে দেখা হবে। সচিবালয়ে দেখা হতে পারে। ভুল-অন্যায় হলে ভুলে যাবেন, ক্ষমা করবেন।

গতকাল রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসর দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার, জনস্বার্থে, প্রয়োজনীয় মনে করলে কোনো কারণ না দর্শীয়ে তাহকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে।

স্বাভাবিকভাবে আগামী বছরের (২০২৩ সাল) ২৫ অক্টোবর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মকবুল হোসেনের। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই তাকে অবসরে পাঠানো হলো।

এ ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, মকবুল হোসেনকে অবসর দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানেন না। তবে অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়টি তিনি জানেন।

২০২১ সালের ৩১ মে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন মকবুল হোসেন। এর আগে তিনি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মকবুল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এ সরকারি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।