ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সিত্রাংয়ে ১০ হাজার বাড়িঘরের ক্ষতি, মারা গেছেন ৯ জন: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২২
সিত্রাংয়ে ১০ হাজার বাড়িঘরের ক্ষতি, মারা গেছেন ৯ জন: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৪১৯টি ইউনিয়নের ১০ হাজার বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’ পরবর্তী সার্বিক বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন,  ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ৪১৯টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ঘরবাড়ি, ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, এক হাজার মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে ২ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ১জন ভোলায় ১ জন, বরগুনায় ১ জন এবং শরীয়তপুরে ১ জন। সবগুলোরই কারণ ঘরের ওপর গাছ ভেঙ্গে পড়া। শুধু ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একজন বাইরে ছিলেন এবং গাছের নিচে চাপা পড়েন। এরমধ্যে গোপালগঞ্জে নিহত দুই জনের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের নীতিমালায় আছে মরদেহ সৎকারের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দেওয়া হবে। বুধবার (২৬ অক্টোবর) থেকে এ সহায়তা দেওয়া শুরু হবে। প্রকৃত ক্ষতির চিত্র জানতে আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। নিয়ম আছে যে দুর্যোগের পর মাঠ প্রশাসন এর তালিকা করবে, তারপর ডিসিরা ডি-ফর্মের মাধ্যমে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাবেন। এরপর আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করব। সেখানে যার যার মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি উপস্থাপন করবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব। এটা করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মহান আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। যে ভাবে সিত্রাং সৃষ্টি হয়েছিল, যে সব পূর্বাভাস ছিল, যেভাবে এর বিস্তৃতি ছিল এবং যেভাবে সরাসরি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছিল, তাতে সবাই পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। কিন্তু সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই ছিল, এটা প্রবল বা অতিপ্রবল বা সুপার সাইক্লোন কোনটাতেই রূপ নেয়নি। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের ওপরে যায়নি। আমাদের যে ঘোষণা ছিল, সেই সময়ের অনেক আগেই অনেক দ্রুত গতিতে আমাদের উপকূল অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বাভাস ছিল, এটা বরগুনা ও পটুয়াখালিরওউপর দিয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আরও উত্তর পূর্ব দিকে টার্ন নেওয়ার কারণে পটুয়াখালি, ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়। ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার শুরু থেকেই আমাদের মাঠ প্রশাসন ও ভলান্টিয়ার কাজ করেছে।

ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, আমাদের প্রায় ৬ হাজার ৯২৫ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষকে আমরা নিরাপদে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা ও শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যেহেতু রাত ১০ টার পরে অতিক্রম করেছ, আশ্রিত মানুষরা মধ্যরাত থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। সকাল হতে হতে সব আশ্রয় কেন্দ্র খালি হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়টি আবার লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা ছাড়াও কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ এমনকি ঢাকাতেও আঘাত হেনেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব নেই। চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ যেগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল, যেগুলো এখন মেরামত করে দ্রুত সংযোগ সম্পাদন করা হচ্ছে। ঢাকায় আমরা দেখেছি গাছ পড়েছে। কয়েক জায়গায় রাস্তা বন্ধ ছিল। তবে, দ্রুত এগুলো সরানো হয়েছে। মোহাম্মদপুরে বেশ জলাবদ্ধতা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি।

এর আগেও মৎস্য ঘেরে ক্ষতি হয়েছে, যদিও এবার সামান্য উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। যে যে পরিমাণ আবেদন করবে সে অনুযায়ী সাধারণত দেওয়া হয়। আমাদের সৌভাগ্য যে, সে সময় ভাটা ছিল এ কারণে জলোচ্ছ্বাস হয়নি। সর্বোচ্চ ২ ফুট পানি প্রবেশ করেছে। শুধুমাত্র ভোলাতে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে এ কারণে সেখানে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে বলেছি চাহিদা পাঠাতে। বুধবার চাহিদা এলেও আমরা বরাদ্দ দিতে পারব। এখন যদি খাদ্যের অভাব থাকে, পর্যাপ্ত মাঠে দেওয়া আছে। যদি লাগে তারা সেটা বরাদ্দ দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।