ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ

ঢাকা: বিদেশি এনজিও কর্মকর্তা কিংবা চিকিৎসক, আবার কখনও প্রকৌশলী বা প্রভাবশালী আমলা পরিচয়ে যৌথ ব্যবসার প্রলোভন দেখাতেন। একটি চক্রের এ ফাঁদে লাখ লাখ টাকা খুইয়েছেন সাবেক সচিবসহ বেশ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

বিভিন্ন সময় প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হন, জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে আবার শুরু করেন প্রতারণা। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে এভাবেই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ চক্রটি।

গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) অভিযান চালিয়ে এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) মিরপুর বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. হায়দার আলী (৬৪), মো. রেজাউল করিম (৩৭), মো. নাসির উদ্দিন (৪৯) ও মো. আব্দুল কাদের (৫৬)।

এ সময় তাদের কাছে থাকা প্রতারণার ২০ লাখ তিন হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, চলতি মাসেই এ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিব। অধিক লাভের আশায় তাদের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে এ সচিব প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন।

এ চক্রের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়জন। তাদের মধ্যে চার সদস্যকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি ও কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, প্রত্যেকবার নাটকীয় উপায়ে এ চক্রটি প্রতারণা করে থাকে। গ্রেফতারের আগে অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের একজন ফোন করে নিজেকে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রকল্পে পরামর্শক পদে চাকরির প্রস্তাব দেন।  

চাকরির বিষয়ে আলোচনা করতে ডাকা হয় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের চক্রটির অফিসে। সেখানে ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেফতার হায়দার আলীসহ অন্যান্যদের পরিচয় হয়। এ সময় প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শুরু করেন।  

চক্রের একজন সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি অন্যান্য সদস্যদের জানান, তার একজন ভারতীয় বস ১৬ কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা কিনবে। এসব পণ্য ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ৩০ পার্সেন্ট লাভ হবে। এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে। কিন্তু সেটা ৭৫ লাখ টাকার জন্য করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চক্রের সদস্যরা সাবেক এ সচিবকে ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন।

প্রথমে রাজি না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনের কারণে তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এরপর পাঁচ লাখ টাকা দেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাকে জানান, নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে, নমুনা পছন্দ করেছে।  

কয়েকদিন পর ভুক্তভোগী প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান কথিত ভারতীয় বস তাদের শর্তের লাভের অংশ হিসেবে চার কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। এবার চক্রটি ভুক্তভোগীকে জানায়, তারা ইমপোর্টারকে চার কোটি ৮০ লাখ টাকা দিতে চাইলে ইমপোর্টার পুরো টাকা অর্থাৎ ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দেবেন না।

এবার পণ্যগুলো কেনার জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করেন।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, এ চক্রটি একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

চক্রের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অফিস সাজিয়ে প্রতারণার কাজ করে। তাদের প্রধান টার্গেট অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বয়োবৃদ্ধ লোক। এ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি করে মামলা আছে বলেও জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা গ্রেফতার করি, তারা জামিনে বেরিয়ে আবার আগের কাজে লিপ্ত হয়। এটা দুঃখজনক। কিন্তু জামিনের বিষয়টা তো আমাদের হাতে না। তারপরও এবার আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাবো।

গ্রেফতার চারজন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আছে এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২২
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।