ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাকরি ফিরে পেতে অঝোরে কাঁদলেন শাহিনুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২২
চাকরি ফিরে পেতে অঝোরে কাঁদলেন শাহিনুর সংবাদ সম্মেলনে শাহিনুর বেগম।

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বাবুর্চি পদের চাকরি ফিরে পেতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ধর্না দিচ্ছেন শাহিনুর বেগম নামের এক অসহায় নারী।  

১০ মাস ধরে বিভিন্ন দপ্তর ঘুরলেও চাকরি ফিরে পাননি ওই নারী।

চাকরি ফিরে পেতে এবং অন্যায়ের বিচার পেতে মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শাহিনুর।

শাহিনুর বেগম বলেন, ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তুলাতলা এলাকার মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সুইপার ও আয়া পদে সফলতার সঙ্গে চাকরি করেছি। পরে ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ‘প্রমোশন অব জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে কুক পদে কর্মরত ছিলাম। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে তুলাতলা মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বাবুর্চি পদে আউটসোর্সিংকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। এখানে কাজ শুরুর পর থেকে ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ও আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ড. মোখলেছুর রহমান আমার সাথে নানা অন্যায় আচরণ শুরু করেন। আমাকে দিয়ে তার মাথা টেপানো থেকে শুরু করে মূল দায়িত্বের বাইরে অনেক কাজ করতে বাধ্য করতেন। আমার স্বামীকে তালাক দেওয়ার জন্য আমাকে অনেকবার জোর করেছেন। সেমিনার কক্ষে সবার সামনে আমার ও আমার স্বামী মো. হাফিজুর রহমানের মোবাইলফোন কেড়ে নিয়েছেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে আমাকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধর করেন এবং একই বছর ৩১ ডিসেম্বর আমাকে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেন। শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত করে তিনি থামেননি, এরপর বার বার আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রিশিয়ান আমার স্বামী মো. হাফিজুর রহমানকেও অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন ড. মোখলেছুর রহমান।

ওই নারী আরও বলেন, শুধু আমার সাথে নয়, ড. মোখলেছুর রহমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসা নারী প্রশিক্ষণার্থী ও নারী চাকরিজীবীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সময় কয়েকজনের সাথে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তুলেছেন। জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অপরাধে তার বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে এক নারী মামলাও করেছিলেন। পোল্ট্রিকর্মী, সহকারী বাবুর্চি এবং মালির স্ত্রীও স্থানীয় নাজমুল হাসান ও ড. মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।

চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে শাহিনুর বেগম বলেন, আমি খুব অসহায়, তাই প্রাণপন চেষ্টা করেছি চাকরি টিকিয়ে রাখার। বিভিন্ন সময় আমার চাকরিতে বহাল করার জন্য বাগেরহাট-৪ আসনের প্রায়ত সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের কাছে লিখিত সুপারিশ করেছি। তারপরও শুধু ড. মোখলেছুর রহমানের খামখেয়ালিপনায় আমি চাকরি ফিরে পাইনি। আমার চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সেসঙ্গে ড. মোখলেছুর রহমান আমার সঙ্গে যে অন্যায় করেছেন তার বিচার চাই।

শাহিনুর বেগমের অভিযোগ অস্বীকার করে মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত ও আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ড. মোখলেছুর রহমান বলেন, শাহিনুর বেগম আউট সোর্সিংয়ে চাকরি করতেন। আউট সোর্সিং কর্তৃপক্ষই তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেয়।  

এছাড়া আদালতে মামলা ও অভিযোগগুলো আপস মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।