ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গিনেস রেকর্ডে নাম লেখালেন বান্দরবানের প্রেন চ্যুং ম্রো

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২২
গিনেস রেকর্ডে নাম লেখালেন বান্দরবানের প্রেন চ্যুং ম্রো

বান্দরবান: পা দিয়ে এক মিনিটে সর্বোচ্চ ২০৮ বার ফুটবল ট্যাপ করে রেকর্ড অর্জন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রেন চ্যুং ম্রো।  

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এই প্রথমবার সাফল্য পেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখালেন এই তরুণ।

তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার এবং বন্ধুমহল।

বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের লামার পাড়ার বাসিন্দা প্রেন চ্যুং ম্রো। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে অধ্যায়নরত। পড়ালেখার পাশাপাশি শখ ফুটবল খেলা আর এই খেলাতেই সাফল্য এনে দিতে আবেদন করেছিলেন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের লামার পাড়ার একটি জরাজীর্ণ কাঁচা ঘরে প্রেন চ্যুং ম্রোর বসবাস। বাবা-মা মারা গেলেও দুই ভাই তিন বোনের সংসারে যৌথভাবে বসবাস করছেন প্রেন চ্যুং ম্রো। উন্নত শিক্ষার জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করলেও বেশিরভাগ সময়ই তার কেটেছে বান্দরবানে।  

২০১৫ সালে সুয়ালক ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ২০১৭ সালে বান্দরবান সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করেই উন্নত শিক্ষার জন্য ১৭-১৮ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার ঘুরে বেড়ান প্রেন চ্যুং ম্রো।

প্রেন চ্যুং ম্রো বাংলানিউজকে বলেন, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য আর কম সময়ে ফুটবল ট্যাপ করার ফুটেজ ও ছবি ই মেইলে পাঠাই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। আর সবকিছু যাচাই বাচাই শেষে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠে আমার। বর্তমানে এক মিনিটে সর্বোচ্চ বার (২০৮ বার) ফুটবল ট্যাপ করার রেকর্ডটিও এখন আমার দখলে। আর এই সাফল্যে ২ নভেম্বর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আমাকে পাঠানো হয়েছে স্বীকৃতিমূলক একটি ই-মেইল।

প্রেন চ্যুং ম্রো বাংলানিউজকে আরও বলেন, এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল কুমিল্লার কনক কর্মকার নামে এক যুবকের দখলে, কনক কর্মকার ফুটবল ট্যাপ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন। আর কনক কর্মকারের এই রেকর্ডটি দেখার পর থেকে তা ভাঙার মনস্থির করে কঠোর অনুশীলনে নেমে পড়ি, কঠোর অনুশীলনে আসে সাফল্য আমার নাম ওঠে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে।  

প্রেন চ্যুং ম্রো বলেন, চলতি বছরের ৩ মে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ‘মোস্ট ফুটবল (সকার) টু ট্যাপস ইন ওয়ান মিনিটস’ ক্যাটাগরিতে কুমিল্লার কনক কর্মকারের রেকর্ড ভঙ্গ করার আবেদন জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দীর্ঘ ৬ মাসেরও বেশি সময় পর যাচাই বাচাই করে বুধবার (২ নভেম্বর) তারা রেকর্ডটির (১ মিনিটে ২০৮বার) স্বীকৃতি দেয় এবং গিনেসের ওয়েবসাইটে রেকর্ডটি অন্তর্ভুক্ত করে আমায় একটি মেইল দেয়, তবে স্বীকৃতিপত্র হাতে পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।  

প্রেন বলেন, আমাদের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। আমার ছোটবেলাতেই মা পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তিনি ঘরে শুয়ে থাকতেন। আর মাকে সেবা করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই আমাকে ঘরে থাকতো হতো। শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবারের টানে সেই দক্ষতা না এলেও অবশেষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ‘মোস্ট ফুটবল (সকার) টু ট্যাপস ইন ওয়ান মিনিটস’ ক্যাটাগরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখাতে পারলাম এটা আমার, এলাকাবাসী এবং দেশবাসী সবার সাফল্য।  

তিনি বলেন, লেখাপড়া শেষ করে জাতীয় ফুটবল দলে যুক্ত হয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জনের প্রত্যাশায় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি এবং আগামীতে এই রেকর্ড ভেঙে আরও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবো সেই প্রত্যাশায় কাজ করছি।

এদিকে প্রেন চ্যুং ম্রোর এমন সাফল্যে খুশি তার পরিবার ও বন্ধুমহল।
প্রেন এর বড় ভাই ক্রং পং ম্রো বাংলানিউজকে জানান, ছোটকাল থেকেই প্রেন চ্যুং ম্রো ছিল খুবই পরিশ্রমী। তাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হতো সে তা সফলভাবে পালন করতো। তার মধ্যে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকতো কীভাবে নিজেকে জয়ী করা যায়। পার্বত্য জেলার মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কোনো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের সন্তান এমন গৌরব অর্জন করেছে, আর সেটা আমার আপন ছোট ভাই জেনে আমি খুবই খুশি। তার যে প্রতিভা রয়েছে তাতে সে আগামীতে আরও বড় অর্জন নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করি।  

প্রেন এর সহপাঠী খুশীলব রয় বাংলানিউজকে জানান, প্রেন খুবই সাহসী এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়, তার এই সাফল্য আমাদের সবার জন্য প্রশংসনীয়।

এদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের সন্তান প্রেন চ্যুং ম্রো এর এমন সাফল্যে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অভিনন্দন জানিয়েছেন আর তাকে আগামী দিনে এগিয়ে যেতে আশ্বাস দিয়েছেন সহায়তার। সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মার্মা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার সন্তান প্রেন চ্যুং ম্রোকে নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত, তাকে আগামীতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।