বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম তানু ভুইয়া হত্যাকাণ্ডের সময় পেরিয়েছে ২০ ঘণ্টা। কোনো মামলা হয়নি।
শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে দুপুর দুইটায় বাসাবাটি এলাকায় নিহত নুরে আলম তানু ভুইয়ার বাড়ির সামনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের পুরাতন বাজার মোড় এলাকায় শেষ জানাজা হয়। পরে সরুই কবর স্থানে দাফন করা হয় সাবেক এ ছাত্রদল নেতাকে।
জানাজায় অংশ নেন নুরে আলমের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, জাতীয়তাবাদী দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। পুরাতন বাজার মোড়ে জানাজা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তারা। এ সময় হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে তারা দাবি করেন। পরে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ঝটিকা মিছিল করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ, বিএনপি নেতা শাহেদ আলী রবি, খায়রুজ্জামান শিপনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে তারা তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এর আগে দুপুর একটার দিকে নুরে আলমের মরদেহ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল গেটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় যারা অংশ নেন, তারাও হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেন। অভিযোগ করে তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সাহসী নেতাকর্মীদের দেশব্যাপী যে হত্যাকাণ্ড ঘটছে এটা তারই ধারাবাহিকতা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হারিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমি নিহতের পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি। জাতীয়তাবাদী দল আজীবন নিহত নুরে আলমের পরিবারের পাশে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান, নিরপেক্ষ থেকে নুরে আলমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, নুরে আলম একজন রাজনৈতিক সাহসী যোদ্ধা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সামিল হয়ে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা সাহসী যোদ্ধা তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় নুরে আলমকেও হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে কথা না বলতে পারে এবং নেতাকর্মীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, যারা হত্যা করেছে তাদের নাম প্রশাসনের কাছে রয়েছে। এর আগেও নুরে আলমকে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছিল। এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির দাবি জানান জেলা বিএনপির এই নেতা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গালিব ইমতিয়াজ নাহিদ বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে নুরে আলমের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
নিহত নুরে আলম তানু ভুইয়ার বোন রুপা বলেন, রাত ৯টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বগা ক্লিনিকের দিকে যায় আমার ভাই। কিছুক্ষণ পরেই পরপর চারটা গুলির শব্দ পাই। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা আমার ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি চাই।
তিন দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমাদের ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। সোমবার (১৩ নভেম্বর) জেলার প্রতিটি ইউনিটে দোয়া ও আলোচনা সভা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। তৃতীয় ও শেষ দিন বুধবার (১৭ নভেম্বর) প্রতিটি উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ চেষ্টা করছে।
ঘটনার ২০ ঘণ্টা পরেও মামলা নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রস্তুতি চলছে। দ্রুতই মামলা দায়ের করা হবে।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি পদ্মপুকুরের মোড় এলাকায় ফরিদ নামের এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন নুরে আলম তানু ভুইয়া। তিনি বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অভিযুক্ত ফরিদ বাসাবাটি এলাকার টুটুল শেখের ছেলে। তার নামে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫টি মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
এমজে