গাজীপুর: অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজার এলাকায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর। এতে কিছু বই ছাড়া নেই কোনো ধরনের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর নির্মাণ খরচ ৬২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি জাদুঘরটির উদ্বোধন হলে এতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি না থাকায় দর্শনার্থীদের তেমন সাড়া নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের সামনে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে লেখা জাদুঘরের নামের কিছু অংশ খসে পড়ে গেছে। অর্ধকোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত জাদুঘরের নামটিও ঠিক করার যেন কেউ নেই।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজার এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। সে স্মৃতি ধরে রাখতে সাকাশ্বর বাজারের পাশে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজার এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার আগেই পাইলট প্যারাসুট নিয়ে পাশের বেগমপুর এলাকায় অবতরণ করেন। ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামছুল হক গ্রুপের সদস্যরা পাক হানাদার বাহিনীর ওই পাইলটকে আটক করে ক্যাম্পে হস্তান্তর করেন। এরপরপরই হেলিকপ্টার নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাইলটকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পাক বাহিনীর পাইলটকে দীর্ঘক্ষণ খোঁজার পর না পেয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পরে বিপুল সংখ্যক পাকসেনা জল ও স্থল পথে সাকাশ্বর এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর গুলির শব্দে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী জীবন বাঁচাতে পালাতে থাকেন। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে ওই এলাকার জানেস আলী ও আব্দুল গফুর মুন্সীসহ নাম না জানা অনেকে শহীদ হয়। মুক্তিযুদ্ধে সাকাশ্বর এলাকার সংঘটিত ঐতিহাসিক ও বীরোচিত এ ঘটনার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে এবং বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ঘটনাস্থলে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বট বৃক্ষের নিচে জাদুঘরটি নির্মাণ করেন।
আওলাদ হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, সাকাশ্বর এলাকায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে কিছু বইপত্র ও চেয়ার-টেবিল রয়েছে। এছাড়া জাদুঘরের ভেতরে শুকাতে দেওয়া হয়েছে লুঙ্গি ও গামছা এবং মেঝেতে রয়েছে বিছানাপত্র। এটা দেখে কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মনে হয় না। জাদুঘরের অদূরে যেহেতু পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে জাদুঘরের রাখতে পারলে তা দেখতে দর্শনার্থীরা এখানে আসতেন।
রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, মানুষ এখানে এসে কী দেখে এ এলাকার ঐতিহাসিক ও বীরোচিত স্মৃতির কথা মনে করবে। সামান্য কিছু বই ছাড়া সম্পূর্ণ জাদুঘরটি তো ফাঁকা।
জাদুঘরের কেয়ারটেকার সরুজ আলী বলেন, জাদুঘরের অদূরে তুরাগ নদের পূর্ব পাড়ে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। পরে অনেকেই ওই বিমানের বিভিন্ন অংশ খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। বিমানের ইঞ্জিনসহ অনেক কিছুই এখন মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। জাদুঘরে তেমন লোকজন আসে না। আমি অল্প কিছু টাকা বেতনে এটা দেখাশোনা করি এবং রাতেও এখানেই থাকি।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বাংলানিউজকে বলেন, জাদুঘরটি নির্মাণের পর এটি কিভাবে চলবে এবং রক্ষণাবেক্ষণ হবে তার পরিকল্পনাই ছিল না। এটা চালাতে বাজেট নেই। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাজেট আসলে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
আরএস/জেএইচ/এএটি