ঢাকা: বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে জমে উঠেছে রাজধানীর জার্সি বিক্রির দোকানগুলো। ভক্তরা এসব দোকান থেকে তাদের পছন্দের ফুটবল দলের জার্সি কিনে নিচ্ছেন।
বিশ্বকাপ ফুটবল উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার দর্শকই বেশি।
বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট এলাকায় স্পোর্টসের দোকানগুলোতে ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। বিশ্বকাপ খেলার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ঢাকাসহ সারাদেশে জার্সি এবং পতাকার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দোকানিরা বলছেন অন্য দেশের জার্সির তুলনায় ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার জার্সি বেশি বিক্রি হয়।
এ দুই দলের জার্সিই শুধু নয়, অন্য দলের ভক্ত যারা আছেন তারা দোকানে গিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত জার্সি পাচ্ছেন না। খুব কম দোকানই আছে যেখানে ভালো মানের আমদানিকৃত জার্সি পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশীয় গার্মেন্টসে উৎপাদিত জার্সিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদ নাসিফ খান বসুন্ধরা থেকে গুলিস্তান এসেছেন জার্মানির জার্সি কিনতে। অনেক দোকানে জার্সি খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে একটি দোকানে জার্মানির জার্সি পেয়ে তিনি খুশি।
তিনি বলেন, বাজারে শুধু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার জার্সি বেশি। অন্যান্য দেশের জার্সি কোনো দোকানদার তেমন একটা আনছে না। যার ফলে আমরা যারা অন্য দেশের ভক্ত আছি সহজে পছন্দের জার্সি খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা জার্সি এবং পতাকা সরবরাহ করতে পারছেন না। খেলার সময় যত কাছাকাছি ঘনিয়ে আসছে জার্সির চাহিদা ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়ে গেছে অনেক বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাড়তি দামে এলসি খোলা এবং লকডাউন জটিলতার কারণে পণ্য আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসায়ীরা যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করেন, সেসব দেশ সময় মতো উৎপাদন করতে পারেনি। যে কারণে সময় মতো প্রোডাক্ট হাতে না পাবার কারণে এ চাহিদা পুরণ হচ্ছে না।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের লগ-ইন দোকানে মালিক আহসান কবীর বাংলা নিউজকে বলেন, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে জার্সির অনেক চাহিদা আছে। তবে সময় মতো প্রোডাক্ট হাতে না পাবার কারণে এ চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। চায়নায় দুই সপ্তাহ ধরে লকডাউন থাকার কারণে তারা শিপমেন্ট ডেলিভারি করতে পারছেন না। অন্যদিকে বেশি দামে এলসি খোলার কারণে প্রোডাক্টের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দুই ধরনের জার্সি আমদানি করি। একটা হচ্ছে প্লেয়ার (খেলোয়াড়দের) ভার্সন আর অন্যটা হচ্ছে ফ্যান (ভক্তদের জন্য) ভার্সন। প্লেয়ার ভার্সন ১২০০ টাকা করে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়। এর ফেব্রিকস খুব ভালো মানের। অন্য দিকে ফ্যান ভার্সন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এর ফেব্রিকস তুলনামূলক একটু নিম্ন মানের। সবই আমদানি করা।
সরেজমিনে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় দেখা যায়, দোকানগুলোতে ফুটবলপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। ভক্তরা দোকানগুলোতে তাদের পছন্দের জার্সি খোঁজ করছেন। কেউ কেউ পতাকা কিনছেন। কোনো কোনো পতাকা মাঝারি আকৃতির, আবার কোনো কোনো পতাকা আট থেকে দশ ফুট পর্যন্ত লম্বা। তবে সবাই পছন্দের দেশের পতাকার সঙ্গে একটি করে বাংলাদেশের পতাকাও কিনছেন।
অনেকে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে পছন্দের টিমের জার্সি কিনতে মার্কেটে এসেছেন। খিলগাঁও থেকে চার বন্ধু প্লেয়ার ভার্সনের ভালো মানের জার্সি কিনতে গুলিস্তান এসেছেন৷ তাদের মধ্যে আবু সাকিন মো. চিন্ময় বাংলা নিউজকে বলেন, আমরা বন্ধুরা মূলত ভালো মানের জার্সি কিনতেই গুলিস্তানে এসেছি। এখানে আমদানিকৃত জার্সি পাওয়া যায়। মূলত এলাকায় বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একসঙ্গে প্রজেক্টরে খেলা দেখব। সেজন্য যার যার পছন্দ মতো জার্সি কিনতে মার্কেটে এসেছি। এতে অন্য রকম এক মজা আছে।
মো রমজান মিয়া গুলিস্তান স্টেডিয়ামের বিপরীতে ফুটপাতে জার্সি বিক্রি করছেন। মূলত তার দোকানে ট্রাউজার বিক্রি হয়। তবে বিশ্বকাপের কারণে ক্রেতাদের অনুরাধে রমজান মিয়া তার দোকানে জার্সি উঠায়। তার দোকানে তুলনামূলক আর্জেন্টিনার জার্সি বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রমজান মিয়া বলেন, আমার দোকানে বাচ্চা থেকে বড় মানুষের ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার জার্সি পাওয়া যায়। ছোট জার্সি ২০০ টাকা, বড় জার্সি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়া ফুলহাতা জার্সি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছি।
ফেনী থেকে বিশ্বকাপ উপলক্ষে জার্সি এবং পতাকা কিনতে এসেছেন ফারুখ আহমেদ চৌধুরি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম চৌধুরীর লাইব্রেরি অ্যান্ড কম্পিউটার কসমেটিকস। এলাকায় চাহিদা বেশি থাকায় মূলত ঢাকার গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সে এসেছেন। কম মূল্যে পাইকারি দামে জার্সি এবং পতাকা পাওয়া যায় বলে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, আজকে আমি ২৫ হাজার টাকার পতাকা এবং জার্সি কিনেছে। এগুলো এলাকায় নিয়ে বিক্রি করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
জেএইচ