ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ ঘটবে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার  

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ ঘটবে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার  

ঢাকা: বাংলাদেশ শিগগরিই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেল নেটওয়ার্ক এবং চীনের বেল্ট ও রোড নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

কারণ বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে এই দেশগুলোর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। খুব শিগগিরই এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেল নেটওয়ার্ক এবং চীনের বেল্ট ও রোড নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ফরমুলেটিং ন্যাশনাল লজিস্টিকস ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ফর বাংলাদেশ: এক্সপেরিয়েন্স ফ্রম গ্রোবাল গুড প্রেকটিস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।  

এ কর্মশালা যৌথভাবে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রনালয় ও বিন্ড ওই কর্মশালার আয়োজন করেছে।  

রেলমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে চলেছে এবং বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক বিস্ময় হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০৩০ সালে ২৮ তম অর্থনীতি ও ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। কিন্তু বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন ২ বছরের কোভিড প্রভাব, তারপর রাশিয়া-ইউক্রেনীয় যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, কাঁচামাল এবং খাদ্য খাতে ধাক্কা লেগেছে। আমাদের সরকার এই সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য অবিরাম চেষ্টা করে চলেছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সহায়তা খুবই প্রয়োজন।

‘একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে সুগঠিত এবং কার্যকর লজিস্টিক সহয়তা প্রয়োজন। দেশীয় এবং বিদেশি উভয় বিনিয়োগকে উত্সাহিত করার জন্য প্রধান পূর্বশর্ত উন্নত লজিস্টিক সহয়তা প্রয়োজন। যা রফতানি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে। এর ফলে টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক র‌্যাঙ্কিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখার জন্যে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে হবে যেন আমরা সামনের দিকে অনেক এগিয়ে যেতে পারি। ’ বলেন তিনি।  

মন্ত্রী আরও বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি আন্তর্জাতিক মাল্টিমডাল লজিস্টিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও যোগাযোগ খাতে খরচ কমাতে পিছিয়ে নেই। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়ন করা হবে, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ একটি মাল্টিমডাল এবং আঞ্চলিক লজিস্টিক হাব (কেন্দ্র) হওয়ার চেষ্টা করবে যাতে দেশের ব্যবসাকে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়।

সড়ক, রেল, বিমান, বন্দর এবং নগর পরিবহনের জন্য নিবেদিত উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ ভিশন-২০৪১ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমস্ত উদ্যোগকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে একটি সু-সমন্বিত পদ্ধতিতে সমস্ত প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

রেল মন্ত্রণালয় ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে কাজ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বন্দরের মধ্যে পণ্য পরিবহনে আরও উন্নত করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মালবাহী পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে। এটার ফলে সমন্বিত পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবে। আমরা মংলা সমুদ্র বন্দরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোকেও অদূর ভবিষ্যতে রেলপথে সংযুক্ত করার কথা ভাবছি।

সরকার দেশব্যাপী রেল যোগাযোগের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য একটি ৩০ বছরের কর্মসূচি নিয়েছে। যা বিশেষভাবে দক্ষিণ জেলা এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে বিদ্যমান নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করে। সারাদেশে ডুয়েল গেজ ও ডাবল ট্র্যাক রেলরুটে কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে সামগ্রিক লজিস্টিক সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন রেলমন্ত্রী সুজন।

মাল্টিমডাল লজিস্টিক মেকানিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের অদূর ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক কার্গো পরিবহন ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

রেলের অবকাঠামো উন্নত করতে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে রেল ট্র্যাকের সক্ষমতা উন্নত করার জন্য কাজ করছে। একইসঙ্গে পায়রা ও মংলা বন্দরের সঙ্গে রেলসংযোগ উন্নত করার পরিকল্পনা করেছে। যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেলওয়ে আরও অবদান রাখতে পারে।

সমাপনী এ কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ সরকার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুব আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
এনবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।