নারায়ণগঞ্জ: বান্টি গ্রাম, যাকে বাটিকের গ্রাম বলা হয়। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নে অবস্থিত এই বান্টি গ্রাম।
পরিবারের ছোট-বড় সবাই এখন এ পেশায় জড়িত। গ্রামের প্রায় দুইশ’ পরিবার এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বান্টিপাড়ায় সব মিলিয়ে মোট ৩৫টি কারখানা রয়েছে।
এই গ্রামে গেলেই চারদিকে দেখা মিলবে লাল-নীলসহ রঙ-বেরঙের কাপড়। রাস্তায়, বাড়ির উঠানে, ভবনের ছাদে, খোলা মাঠে বাটিকের নকশা করা সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, বিছানার চাদর ও বালিশের কভারের কাপড় রোদে শুকানো হচ্ছে। কিংবা থরে থরে সাজানো রয়েছে। তাই গ্রামটি এখন বাটিকের গ্রাম বলেই সবাই জানে।
সরেজমিনে বান্টি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাদা কাপড়ে বাটিকের নকশা করছেন শত শত মানুষ। হাজার হাজার পোশাকে বাটিক প্রিন্টের কারুকাজ করছেন কারিগররা।
কেউ কেউ কাপড়ে দেয়ার জন্য রঙ মেশানোর কাজ করছেন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত।
ফ্যাশন প্রিয়দের কথা মাথায় রেখে কাপড়ে ভিন্ন ভিন্ন নকশা দেন একেকজন কারিগর। যে নকশাগুলো ঢেকে দেওয়া হয় মোম দিয়ে।
কেউ কেউ গরম পানি দিয়ে সেই মোম গলানোর কাজ করছেন।
বাটিক করার পর কাপড়গুলো শুকানোর জন্য মাঠে ও ছাদে বিছিয়ে দেয়া হয়।
কড়া রোদে শুকানোর পর তা কারখানায় নিয়ে আসেন শ্রমিকরা। এরপর কারখানায় কাপড়গুলো ভাঁজ করা হয়। যারা এখানে কাজ করেন তারা সবাই পারিবারিকভাবে এ কাজে জড়িত।
মল্লিকা ডায়িংয়ের মালিক জুলহাস জানান, ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাটিক পোশাক। গরমকালে বাটিকের চাহিদা বাড়ে। আর এই পোশাক পরতেও আরামদায়ক। চাহিদা থাকায় একসময় লাভজনক ছিল বাটিকের ব্যবসা। তবে বর্তমানে সুতা, রং, কেমিক্যালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাটিকের ব্যবসা আর আগের মতো নেই। তাই অনেকে অন্য ব্যবসা খুঁজছেন।
দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে বাটিক পেশায় জড়িত মোতালেব মিয়া বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের শ্রমিকের মজুরী বাড়ে না। আগে কাজ করে মোটামুটি সংসার চালাতে পারতাম। এখন দুই বেলা খাবার জোগাড় করাই কষ্টকর।
গ্রামের মুরুব্বিরা বলেন, বান্টি গ্রামের প্রায় সবাই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটা তাদের নিজস্ব ব্যবসা। এলাকার শ্রমিক দিয়েই কাজ করানো হয়। তাই তাদের ব্যবসাটা লাভজনক। তবে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের ব্যবসাটাও ভালো যাচ্ছে না। এছাড়া এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। আগে প্রতিযোগিতা কম ছিল। এখন ১০০ জনের জায়গায় ৫০০ জন ব্যবসা করেন। যার কারণে ব্যবসা যাচ্ছে খারাপ দিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
ডিএইচবি/এনএস