ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই

আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা যেন একেবারে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

খোদ স্টেশন কর্মচারীরাই এই টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এটির কারণে টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট অনেকটা প্রকাশ্যে বাণিজ্য করলেও তা নিয়ে স্টেশন কর্মকর্তাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই। ভুক্তভোগী অনেক যাত্রীদের মুখেই শোনা গেছে এমন অভিযোগ।

জানতে চাইলে টিকিট কালোবাজারি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ স্টেশন সুপারিনডেন্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন- টিকিট কালোবাজারি আছে, থাকবেই। তবে আমি কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিন্তু অগোচরে হলে আমি কি করবো বলে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই কর্মকর্তা।

তবে যাত্রীরা চাইলে কালোবাজারি বন্ধ হওয়া সম্ভব দাবি করে তিনি আরও বলেন, স্টেশনে জিআরপি পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী আছে, তাদের দ্বায়িত্ব এসব দেখা। তবুও বিভিন্ন পথে টিকিট কালোবাজারে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও রেজিস্ট্রি করা বীরমুক্তিযোদ্ধার টিকিট কালোবাজারিদের হাতে ধরা পড়েছে। কিন্তু সব দোষ হয় আমার!

স্টেশন সুপারিনডেন্টের দাবি, যতদিন পর্যন্ত টিকিটের চাহিদা এবং সরবরাহে সমন্বয় না হবে, ততদিন টিকিট কালোবাজারি থাকবেই। কারণ ময়মনসিংহ স্টেশনে প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার যাত্রী আসেন। তার বিপরীতে সিটসহ টিকিট পান মাত্র ২৩৭ জন। এই অবস্থায় কি আর করার আছে বলেও প্রশ্ন ছুড়ে দেন জাহাঙ্গীর আলম।

নিয়মিত এই রুটে চলাচল করা একাধিক কর্মজীবী যাত্রীর অভিযোগ, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের খোদ টিকিট বুকিং হেড ও বুকিং সহকারীরাই এই কালোবাজারির মূলহোতা। তারাই এই কালোবাজারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। অবৈধ পথে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রি করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন হেড বুকিং সহকারি হামিদুর রহমান, রেলওয়ে সহজ ডট কমের কর্মচারী জাকির, বুকিং সহকারি রফিক, রিমু, জুলফিকার ও সোহেল। তারাই মূলত বিভিন্ন কায়দায় স্টেশন কাউন্টার থেকে এসব টিকিট কালোবাজারিদের হাতে পৌঁছে দেন।

এরপর স্টেশন এলাকার চিহ্নিত কালোবাজারি তপন সাহা, মিনার, আব্দুস ছাত্তার, জাবেদ, মুহিত, ইজ্জত আলী, আবু তাহের এবং সংশ্লিষ্টরা মিলে এই টিকিট অতিরিক্ত মূল্যে কালোবাজারে বিক্রি করেন।

সূত্র মতে, ময়মনসিংহ রেলপথে প্রতিদিন ৪২টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্ত:নগর ট্রেন সাতটি। এগুলো হচ্ছে- তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, অগ্নিবীণা, হাওড়, মোহনগঞ্জ ও বিজয় এক্সপ্রেস। এদের মধ্যে একটি চট্টগ্রামমুখী এবং বাকি ছয়টি ঢাকামুখী।

স্টেশন কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকেন। এর বিপরীতে সিটসহ টিকিট বরাদ্ধ রয়েছে ২৩৭টি, আর সিট ছাড়া টিকিট বরাদ্ধ আছে প্রায় ৭০০।

অভিযোগ উঠেছে, আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন ২৮টি টিকিট যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পরিবারের জন্য বরাদ্ধ থাকে। কিন্তু সংরক্ষিত এই ২৮টি টিকিটের একটিও পান না সংশ্লিষ্টরা।

ফলে প্রতিদিন এসব টিকিট বিক্রি হয় কালোবাজারে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার নামও চাউড় হয়ে উঠেছে স্টেশনের ভেতরে-বাইরে।

নগরীর বাকৃবি এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আল আমিন মণ্ডল বলেন, কয়েকবার আমি ট্রেনে যাতায়তের জন্য টিকিট নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোঠা থাকা স্বত্বেও আমি টিকিট পাইনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোঠায় বরাদ্ধ থাকা টিকিটগুলো প্রতিদিন কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যায়। অথচ যাদের জন্য সরকার সেগুলো বরাদ্ধ দিয়েছে তারাই টিকিট পাচ্ছেন না।

এসব অভিযোগে বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও টিকিট বুকিং হেড ও সহকারীদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো কিছুই স্টেশন কর্তাদের অগোচরে হয় না। তারা সবই জানেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।