ফরিদপুর: পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও অভিভাবকরা সেই ইচ্ছার লাগাম টেনে নবম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে ঠিক করেছিল। সোমবার (২১ নভেম্বর) ছিল বিয়ের দিন।
তার আগেরদিন রোববার (২০ নভেম্বর) পুলিশকে ফোন করে নিজেই অভিভাবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পর অবশেষে বন্ধ হয়েছে সেই বাল্যবিয়ে। অপরিণত বয়সে সংসারের দায় থেকে মুক্তি মিলেছে জয়ঝাপ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীর। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দরগা গট্টি গ্রামে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাে. শেখ সাদিক জানান, মেয়েটি রোববার সকালে আমাকে ফােন দিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ের কথা জানায়। বলে সে পড়াশোনা করতে চায়, কিন্তু বাবা-মা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাের করে বিয়ে দিতে চাইছে। সােমবার ফরিদপুরের কাের্টে নিয়ে তার কাবিন সম্পন্ন করে বিয়ে দেওয়া হবে। এই সংবাদ পেয়ে একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে মেয়েটির বাড়িতে পাঠাই।
ওসি আরও বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর বাবা আতিক মাতুব্বর একজন ভূমিহীন কৃষক। নিজের বলতে এক টুকরো জমিও নেই। পরের বাড়িতে কামলা দিয়ে সংসার চলে। এক মেয়ে ও তিন ছেলে তার। এদের মধ্যে এই মেয়েটিই সবার বড়। সংসারের দায় কমাতে আর উঠতি বয়সী মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি বিয়েতে রাজি হন।
মেয়েটির বাবা আতিক মাতুব্বর বলেন, আমার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে দুই-তিনদিন আগে ছেলেপক্ষ দেখতে এসে পছন্দ হওয়ায় নাকফুল পড়িয়ে যায়। তবে বিয়ের দিন-তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ অবস্থায় রোববার সকালে সালথা থানার ওসি আমাদের থানায় ডেকে বিয়ে বন্ধ করতে বলেন। আমরা তাকে বাল্য বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা দিয়েছি থানায়। দুপুরে ওসি সাহেব আমাদের বাড়িতে এসে মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবেন বলে জানান। মেয়েটি পড়াশোনা করতে পারবে জেনে আমরাও খুশি।
জয়ঝাপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান মাে. মিরাজ আলী বলেন, সালথা থানার ওসি মেয়েটাকে নিয়ে দুপুরে আমার স্কুলে আসেন। তিনি মেয়েটির বাল্যবিয়ে বন্ধের কথা জানান এবং তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহনের আশ্বাস দেন। পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহী মেয়েটির উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে পারায় তিনি ওসি সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বাল্যবিয়ে ঠিক হওয়ার পরে নিজেই পুলিশকে ফোন করে বন্ধের ব্যাপারে মেয়েটি বলেন, আমার পড়াশোনা করার প্রচণ্ড ইচ্ছা। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে অজ্ঞতাবশত বাবা-মা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছিল। এজন্য আমি ওসি স্যারকে ফােন করে বিষয়টি জানালে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন।
বিয়ে বন্ধের জন্য পুলিশকে ফোন দেয়ার কথা মনে এলো কেন এ প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি জানায় যে, তার বান্ধবীদের কাছ থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করে সে ওসি সাহেবকে ফোন দিয়েছে।
এব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাে. শেখ সাদিক বলেন, এখন থেকে মেয়েটির পড়াশোনার সমস্ত খরচের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আমি যখন এখান থেকে চলে যাব, তখন যিনি আসবেন তাকেও এই দ্বায়িত্ব দিয়ে যাব। এছাড়া আমি নিজেও সবসময় ওর খােঁজখবর রাখব।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
এমএমজেড