কুমিল্লা: কুমিল্লায় প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) ভর্তি থাকা কলেজ শিক্ষার্থীকে (১৭) যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এক ওয়ার্ড বয়ের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থীর ওই আত্মীয় ফেসবুকের ভিডিওতে ঘটনার বিচার দাবি করেন। ৭ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে তিনি বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে (কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতাল) ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর ঘটনা আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। শেষ রাতের দিকে আমার ওই বোন যখন কান্নাকাটি করতে থাকে, ভেতর থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে বললে আমরা দেখা করতে যাই। তখন সে কান্না করতে করতে জানায়, দীপক নামের এক ওয়ার্ড বয় তার শরীরে একাধিকবার স্পর্শ করেছে। আমার পক্ষে আসলে এটা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তারপর আমরা ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন একটা দায়সারা ভাবে আছে। তারা এমন ভাব করছে যেন এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে, আমরাই শুধু রিঅ্যাক্ট করলাম।
এসময় তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে দীপক এখানে চাকরি করছে। ২০১৩ সাল থেকে যদি দীপক আইসিইউতে থেকে থাকে তাহলে সে রেগুলারই এই কাজগুলো করে গেছে। এই দীপকরা অন্য যেসব হাসপাতালে আছে, আমার মা-বোনেরা হয়তো তাদের অত্যাচার-অনাচারের শিকার হচ্ছেন। আমার এই ভিডিও করা উদ্দেশ্য হলো সবাইকে সতর্ক করা।
ওই কলেজ শিক্ষার্থীর বড় ভাই বলেন, আমার বোন শুক্রবার অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের (টাওয়ার হাসপাতালের) ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে একজন দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, বোনকে যেন আইসিইউতে নিয়ে যাই। তখন আমরা ওই হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাই। সেখানে বিকেল থেকে পরদিন শনিবার সকাল পর্যন্ত ছিল সে। শেষ রাতের দিকে তার কান্নার কথা জানালে দায়িত্বরতরা আমাদের ভেতরে যেতে দেন। ভেতরে গেলে সে জানায় আইসিইউতে এক ব্যক্তি তার শরীরের বিভিন্নস্থানে স্পর্শ করেছে। তার নাম দীপক। সে ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। এই কারণেই সেখানে অসুস্থ বোন কান্না করছিল। সে রোববার আবার অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে আবার হাসপাতালে নিতে হয়েছে। সে এই বিষয়টা মেনে নিতেই পারছে না।
তিনি আরও বলেন, টাওয়ার হাসপাতালে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তারা নাকি তদন্ত কমিটিও করছে।
ঘটনায় অভিযুক্ত দীপক চন্দ্র দাসের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ঘটনার পর ওই ওয়ার্ড বয়কে হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও যারা ওই সময় আইসিইউতে দায়িত্বশীল ছিলেন সবাইকে শোকজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইসিইউতে ডাক্তার ও নার্স আলাদা রয়েছে। দীপক তাদের সাহায্যে নিয়োজিত ছিল। সে শুধু ডাক্তার ও নার্সদের সাহায্যের জন্যই সেখানে থাকত। হাসপাতাল সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আমাদের আইসিইউ বেডগুলোতে কোনো সিসিটিভি নেই। তবে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথে তা আছে।
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়:১৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
এসএম