ফরিদপুর: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় জমি বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলায় গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরুষ শূন্য অবস্থায় রয়েছে ১০টি পরিবার। প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে আতঙ্কে দিনযাপন করছে ওই পরিবারগুলোর নারী সদস্য ও সন্তানরা।
ঘটনাটি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের তপন খাঁর ডাঙ্গী গ্রামের। এ ঘটনায় ওই ১০ পরিবারের ২৫টি বসতঘর, ৪টি দোকানঘর ভাঙচুর, লুটপাটসহ ধান ক্ষেতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত জেরে গত ৮ অক্টোবর শাখাওয়াত সরদার গংদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে একই গ্রামের সিরাজ সরদার গংদের। এদিন শাখাওয়াত সরদার গংয়ের রশিদ সরদার, জলিল সরদার, শাখাওয়াত সরদার, শহীদ সরদার, লিয়াকত সরদার, ফারুক সরদার, আয়নাল খাঁ, আফছার সরদার, সিরাজ মণ্ডলের বসতঘরসহ অন্তত ২৫টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে নেয় সিরাজ গং।
এছাড়া ২৩ অক্টোবর কারিরহাট বাজারে শামীম হোসেন নামে একজনের মুদি দোকান, একটি চায়ের দোকান, ৩টি ডেকোরেটরের দোকান ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে ২টি জেনারেটর মেশিনসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় পাল্টা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর পুরুষ সদস্যের নামে থানা ও কোর্টে তিনটি মামলা হওয়ায় বাড়ি ছাড়া রয়েছেন তারা।
এরপর থেকে পরিবারগুলোর নারী সদস্য ও ছেলে-মেয়েদের হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে নারী সদস্যরা অভিযোগ করেন।
শহীদ সরদারের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, সিরাজ সরদার ও দেলোয়ার সরদারের বসতবাড়ি আমাদের জমির ওপরে। ওই জমি ছেড়ে দিতে বললে তারা জানায় ছাড়তে পারবে না। এ নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে তারা তিন/চারশত লোক নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করে নিয়ে যায়। বাজারের দোকানগুলোতেও হামলা চালিয়ে মালামাল ও দুটি জেনারেটর নিয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫টি গরু ফেরত পাই, আর কোনো কিছু পাইনি।
এছাড়া ১৩ অক্টোবর আমরা তিনজন নারী রাতে থানা থেকে আসার সময় একজনকে অতর্কিতভাবে কুপিয়েছে তারা। পরে এ ঘটনাগুলো নিয়ে আমরা কোর্টে একটি মামলা করি, তারা থানায় ও কোর্টে মামলা করে। মামলায় আমাদের পুরুষ লোকেরা জামিনে আছে কিন্তু বাড়িতে আসতে পারে না, এলেই তারা হামলা করে। ওরা বলে, যে বাড়িতে আসবে তাকেই মারধর করা হবে। ২১ অক্টোবর জামিনে থাকা কয়েকজন বাড়িতে এলে একজনকে ওরা (প্রতিপক্ষ) ফোন দিয়ে বাড়ির পাশে নিয়ে মারধর করে। এই ভয়ে বাকিরা বাড়িতে আসতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে কোর্টে একটি মামলা করি। আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে মিলে যেতে চাইলেও তারা মেনে নিচ্ছে না। আমরা এখন নিরাপত্তা চাই। আমাদের পুরুষ লোক বাড়িতে ফিরে আসুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ফারুক সরদারের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, বাড়িতে পুরুষ লোক না থাকায় সিরাজ সরদাররা আমাদের মাঠের ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় একটি শ্যালো মেশিনও পুড়িয়ে দেয়। ছেলে-মেয়ের সামনে পরীক্ষা, ওরা ভয়ে বাড়িতে আসতে পারতেছে না।
চায়ের দোকানদার আফছার সরদারের স্ত্রী বলেন, চায়ের দোকানের ওপর আমাদের সংসার নির্ভর। চা, পান, সিগারেট বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে। দোকান ভাংচুর করার পর থেকে আমার স্বামী ভয়ে বিভিন্ন জায়গা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, দোকান খুলতে পারতেছি না।
ভাষাণচর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর সুমন মোল্লা বলেন, ওদের মধ্যে টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি এমপি পর্যন্তও জানে কিন্তু এখনও কোনো সমাধান হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সিরাজ সরদারের ভাই দেলোয়ার সরদার বলেন, সিরাজ সরদারের বিল্ডিংয়ের পাশে ওদের একটি জমি রয়েছে। ওই জমির আইল নিয়ে সমস্যা হওয়ায় শাখাওয়াতরা প্রথমে হামলা করে। এরপর হয়তো রাগে ক্ষোভে কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওরা আমাকে প্রধান আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিষয়টি নিয়ে ওরা মীমাংসার কথা বললেও আবার হুমকি-ধমকিও দেয়। এজন্য মীমাংসায় যাওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তারা থানায় এসে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
আরএ