সিলেট: পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে যাওয়া এক নারীকে অফিস কক্ষে আটকে প্রাণনাশের হুমকি ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী সাহারা খানম (৫৩) সিলেট মহানগরের মোগলাবাজার থানাধীন গোটাটিকর পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পরদিন ১৭ নভেম্বর জিডির ঘটনায় বর্ণিত অপরাধ তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। এ প্রেক্ষিতে রোববার (২০ নভেম্বর) ওই সাধারণ ডায়েরির তদন্তে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মেট্টোপলিটন ২য় আদালতের বিচারক।
সাধারণ ডায়েরিতে ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করেন, পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যেতে পাসপোর্ট করতে ব্যাংক চালান জমাসহ সব নিয়ম মেনে গত ১০ নভেম্বর তিনি আবেদন জমা দিতে যান। কিন্তু অফিসে কর্তব্যরতরা আবেদনে বিশেষ ‘চিহ্ন’ না থাকায় তা অনলাইনে নিবন্ধন করেননি। এ জন্য ফিঙ্গার না নিয়ে তাকে বারবার হয়রানি করতে থাকেন। গত ১৪ নভেম্বর বিষয়টি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জানাতে গেলে তাকে না পেয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করে সহযোগিতা চান। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পরামর্শ দেন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বলতে তিনি সুপারিশ করেছেন।
ভুক্তভোগী নারী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বললে কর্মকর্তারা তার ওপর ক্ষেপে গিয়ে বলেন, তারা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের চাকরি করেন না। তার কাছে কেন গেছেন বলে গালিগালাজ শুরু করেন।
এরপর সাহারা খানম পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক উম্মে সালমা তানজিয়ার মোবাইল ফোনে কল দেন। বিষয়টি তাকে জানালে তিনি সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মাজহারুল ইসলামের কাছে গিয়ে তার নাম বলতে বলেন। তিনি সাহারা খানমের পাসপোর্টের ফিঙ্গার নেওয়ার বিষয়ে সহায়তা করার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু হলো উল্টো!
গত ১৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে সাহারা খানম পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকের কক্ষে গিয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কথা বললে তিনি তাকে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন।
পরিচালক মাজহারুল ইসলাম সাহারা খানমকে বলেন, আপনার পাসপোর্টের জন্য জনৈক ছয়েফ খানকে ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন মর্মে একটা লিখিত অভিযোগ দিলে ফিঙ্গার নেওয়া হবে। একথা শুনে সাহারা খানম পাসপোর্ট করার জন্য কাউকে কোনো টাকা দেননি বলে জানান এবং কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে অস্বীকার করেন। তখন পরিচালক মাজহারুল ইসলাম তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
এক পর্যায়ে পরিচালক তার অফিসে কর্মরত আরও দুজন কর্মকর্তাকে ডেকে এনে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। তখন যদি তার কথা মতো একটি লিখিত অভিযোগ না করি তাহলে তিনি সাহারা খানমকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও প্রাণে মারার হুমকি দেন।
এরপর সাহারা খানম ভয়ে তার কথামতো একটা সাদা কাগজে ‘ছয়েফ খানকে পাসপোর্টের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়েছি’ লিখে দিলে পরিচালক তার অফিসে কর্মরত আরও দুই কর্মকর্তার মাধ্যমে তার পাসপোর্টের ফিঙ্গার নেন।
পরে ভুক্তভোগী সাহারা খানম বাসায় ফিরে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য তিনি মোগলাবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর প্রেক্ষিতে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সাধারণ ডায়েরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
এনইউ/এমজেএফ