ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একটি চক্রই হুন্ডিতে পাচার করেছে ৩ কোটি টাকা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
একটি চক্রই হুন্ডিতে পাচার করেছে ৩ কোটি টাকা! সিআইডির হাতে গ্রেফতার হুন্ডি চক্রের সদস্যরা -বাংলানিউজ

ঢাকা: মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে একাধিক চক্র। এমনই একটি চক্র গত চার মাসে তিন কোটি টাকা হুণ্ডি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তারা জানায়, এমএফএসের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বিদেশে অবস্থানরতদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধের মাধ্যমে অর্থ পাচার করছেন।

সিআইডির ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম ইউনিট সোমবার (২১ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এমনই একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (২৮), খোরশেদ আলম (৩৪), মো. ইব্রাহিম খলিল (৩৪), কাজী শাহ নেওয়াজ (৪৬), মো. আজিজুল হক তালুকদার (৪২) ও মো. নিজাম উদ্দিন (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে তার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে।   প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদেরকে দেয়।

দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে দেয়।   তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। এভাবে চক্রটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে।

সিআইডি প্রধান বলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়। ওই দুটি সিম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এরকম আরও ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি। যাদের মাধ্যমে এরকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য রয়েছে। ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুভির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত।

ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করতে তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। গ্রেফতারদের জিজিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, 'ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম' এমন একটি সফটওয়্যার। যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।

সিআইডি প্রধান বলেন, এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থানীয় সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচা, মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ আছে। এই ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের মালিক ও কর্মচারীদের উচিৎ অধিনস্ত যেসব এজেন্ট তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা। যদি মনিটরিং না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে।

পাশাপাশি বিকাশ, রকেট ও নগদ কর্তৃপক্ষ যারা ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ অনুমোদন দিয়েছেন তাদেরকে নিজেদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ অবশ্যই মনিটরিং করতে হবে। তারা যদি মনিটরিং না করে তাহলে আমরা বাধ্য হবো তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে।

প্রবাসীরা যেন তাদের অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠায়, সেক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হবে ও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।