বরিশাল: বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে এ কমিটি করা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কলেজের উপাধাক্ষ্য সালমা বেগমকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- কলেজর শিক্ষক প্রভাষ কুমার মণ্ডল ও মো. হাবিবুর রহমান। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যদিও এ কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতেই কলেজ প্রশাসন এ অভ্যন্তরীণ কমিটি করেছে। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে সত্যিকারের ঘটনা বেরিয়ে আসতো।
অভিভাবকরা বলছেন, এখন যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে আত্মহননকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নানা যুক্তি তুলে ধরা হবে এবং সেই যুক্তির সপক্ষে মিথ্যে নানা তথ্যও তুলে ধরা হতে পারে। শেষে দেখা যাবে, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তার কিছুই হবে না।
যদিও কলেজ প্রশাসন বলছে, এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যাতে সত্যি ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এর আগে, রোববার (২০ নভেম্বর) বিকেলে বরিশাল ও কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী (১৭) নিজ বাসার বারান্দা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
শিক্ষক পরিবারের সন্তান মৃত ওই ছাত্রীর স্বজনদের দাবি, রোববার দুপুর ১টায় কলেজ থেকে ওই ছাত্রী বাসায় আসে। এরপর ওই ছাত্রীর মাকে জানিয়েছেন গণিত বিষয়ে তিনি ফেল করতে পারে না, তাকে ফেল করানো হয়েছে। এজন্য তার মন মেজাজও ভালো ছিল না। তাই তিনি নিজের রুমে চলে যান। এরপর তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে ওই ছাত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন উল-ইসলাম হাবুল পরিবারের বরাতে সাংবাদিকদের জানান, কলেজের গণিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েনি ওই ছাত্রী। এ কারণে তাকে বর্ষ পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে ফেল করানো হয়েছে। বিষয়টি ওই ছাত্রী শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিল। তখন শিক্ষক তাকে কোনো কিছু বলেছেন, যা মেনে নিতে পারেননি।
এদিকে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে সভা আহ্বান করেছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি। সেখানে কলেজ শিক্ষকদের প্রাইভেট বন্ধ করাসহ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি নিয়ে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অধ্যক্ষ হাবুল।
কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগির হোসেন বলেন, ছাত্রীর পরিবার বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন। তার অনুমতিক্রমে ছাত্রীর মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার (২১ নভেম্বর) কলেজ অ্যাসেম্বলিতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনামূলক সভা করা হয়েছে।
কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষায় খারাপ করলে মন খারাপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। পরীক্ষার ফলাফলের চেয়ে জীবন বড় জানিয়ে যেকোনো সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ ও উপাধাক্ষ্যসহ শিক্ষকরা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
পরিবার ও অন্যান্য সহপাঠীরা জানান, ওই ছাত্রী উচ্চতর গণিতে অবজেক্টিভে ১৮ এবং রিটেনে ১৬ নম্বর পেয়েছেন। রিটেনে ১৭-তে পাস। মাত্র এক নম্বরের জন্য ফেল করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, অ্যাসেম্বলিতে শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কলেজের ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একেকটি গ্রুপ করে একজন শিক্ষককে মেন্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেন্টর শিক্ষকদের সভা করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>>‘প্রাইভেট না পড়ায়’ ফেল, কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২২
এসএম/এএটি