ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

'আধুনিক নগর তৈরিতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন'

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
'আধুনিক নগর তৈরিতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন'

ঢাকা: আধুনিক নগরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সমন্বিত পরিকল্পনার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত 'বঙ্গবন্ধুর নগর ভাবনা ও বাংলাদেশ ২০৪১: স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও বাস্তবায়নের পথনকশা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুর নগর ভাবনার বিষয় উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, সুপরিকল্পনার মাধ্যমে একটি দেশ স্বাধীন করা যায়, সেটা তো বঙ্গবন্ধু আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি একটি দেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরই তিনি প্রথম যে কাজটি করেছেন, সেটি হলো দেশের সংবিধান প্রণয়ন করা। আমাদের সংবিধানে সব কিছুই আছে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর যেসব কথা বলছি, সেগুলো তিনি ৫০ বছর আগেই পরিকল্পনা করে গেছেন।

আধুনিক নগর ভাবনায় বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালেই বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারও চার বছর পর চীনের মাও সে তুং ১৯৭৮ সালে তার দেশে একটি সন্তানের পরিকল্পনা হাতে নেন। ১৯৭৪ সালে স্বাধীন পরিকল্পনা কমিশন করা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় করার মতো বড় বড় উদ্যোগ তিনি বহু আগেই নিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো শেষ করে যেতে পারেননি।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আরও বলেন, আমরা অনেক পরিকল্পনাই করি, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। এর কারণ আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন—খেলার মাঠ বা পার্ক ধ্বংস করা যাবে না। কিন্তু আমাদের যারা উন্নয়ন কাজ করেন এরা এসব ধ্বংস করে দিচ্ছেন। পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। প্রথমে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। তাহলে সেই উন্নয়ন ফলপ্রসূ হবে, জনগণের কাছে উন্নয়নের সুবিধা পৌঁছে দিতে পারব।

সমন্বয়হীনতার উদাহরণ দিয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, এমআরটি প্রকল্পের পরিচালক বিদেশি পরামর্শকসহ আমার সাথে বৈঠকে বসলেন৷ আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, আপনার যে পথের পরিকল্পনা করছেন সেই পথে যাত্রী সংখ্যা কত? কোথাকার যাত্রী এই পথ ব্যবহার করে? এই পথের ইকোনমিক ভায়াবিলিটি কী? তখন ওই বিদেশি পরামর্শক স্বীকার করেছেন এগুলোর কোনো ফিজিবিলিটি স্টাডি তাদের নেই। শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যই আমরা প্রকল্প হাতে নেই, এর কোনো সঠিক পরিকল্পনা থাকে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু আধুনিক নগররাষ্ট্র নির্মাণ ও বিকেন্দ্রীকরণের যে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটা আমরা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অনেকে উপজেলা বা জেলা করার বিষয়গুলো এরশাদের পরিকল্পনা বলে চালিয়ে দেন, এসব পরিকল্পনা সবগুলোই বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। তিনি দেশকে আমলাতন্ত্রের হাত থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতায়নের পক্ষে ছিলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাই, সেসব দেশে দেখে বলি—আমাদের দেশটা যদি এমন হতো! কিন্তু আমরা নিজের দেশের জন্য সেই কাজটা করি না। আমরা আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রমে যদি তাদের অনুসরণ করি তাহলেই আমাদের দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আর এ জন্য দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের বড় সমস্যা আমরা সবকিছু কুক্ষিগত করতে চাই, কেন্দ্রীভূত করতে চাই। গ্রামে একটা স্কুল করবে, সেটার জন্য আমার কেন সিগনেচার করতে হবে? এটা শিক্ষা বোর্ড বা অধিদপ্তর করতে পারে। কিন্তু এটাকে আমরা কঠিন করে ফেলেছি। আমার দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলাতে, কিন্তু এর সদর দপ্তর ঢাকায়। এভাবে আমরা সব সেন্ট্রালাইজড করে ফেলেছি। আমাদের বিকেন্দ্রীকরণের দিকে হাঁটতে হবে। ঢাকাকে বাঁচানোর জন্য ঢাকার বাইরের শহরগুলোকে যথাযথভাবে ক্ষমতায়ন করা জরুরি।

বিআইপি'র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে  লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান, শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ নাহিম রাজ্জাক, সিলেট-৩ আসনের সংসদ হাবিবুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১১ এর অ্যারোমা দত্ত, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম, নগর গবেষণা কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম মর্তুজা, নগর পরিকল্পনাবিদ শওকত আলী খান বক্তব্য রাখেন। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
এসআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।