ঢাকা: সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সামুদ্রিক সম্পদ রয়েছে এবং এ ব্লু ইকোনমির ওপর ৩০০ কোটির বেশি লোক নির্ভরশীল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এ ব্লু ইকোনমিতে বিনিয়োগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মেরিন ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি বলেও জানান তারা।
রাশিয়ার সচি শহরে আয়োজিত পরমাণু শিল্প বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এটমএক্সপো ২০২২ এর সমাপনী দিনে ২২ নভেম্বর ‘নীল অর্থনীতি: টেকসই ভবিষ্যতের লক্ষে সরকার, ব্যবসা ও বিজ্ঞান’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ মত দিয়েছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ও পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্লু ইকোনমিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রথাগত এবং উদীয়মান বেশ কিছু শিল্প যেমন জাহাজ চলাচল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর অবকাঠামো, জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত, মেরিন কন্সট্রাকশন ও ড্রেজিং, সমুদ্রবর্তী গ্যাস ও তেল আহরণ, মেরিন গবেষণা ও শিক্ষা, ফিশিং, সি-ফুড প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামুদ্রিক সম্পদ রয়েছে। ব্লু ইকোনমির ওপর ৩০০ কোটির ওপর লোক কম-বেশি নির্ভরশীল এবং এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ক্রমবর্ধমান এ অর্থনীতির আকার ২০৩০ সাল নাগাদ তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
গোলটেবিল বৈঠকে রাশিয়া, মিশর, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশেষজ্ঞরা সমুদ্র অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা, চ্যালেঞ্জগুলো এবং এর উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
বক্তারা সমুদ্র অর্থনীতির বৈশ্বিক এবং আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি তুলে ধরেন এবং অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার, ব্যবসা ও বিজ্ঞানের জন্য এটি একটি সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণায়লয়ের অধীনস্থ বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক নাতালিয়া স্টাপরাণ এবং মস্কোর লামানোসভ স্টেট ইউনিভার্সিটির মেরিন গবেষণা সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক নিকোলাই সাবালিন, ব্লু ইকোনমির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, জল প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন ও ডিজিটাল দিকগুলো উপস্থাপন করেন।
মিশরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অর ওশেনোগ্রাফি অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক মোহামেদ আহমেদ বলেন, ‘ব্লু ইকোনমিতে বিনিয়োগকালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মেরিন ইকোসিস্টেমের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা অত্যন্ত জরুরি’। তার মতে পরিবেশ কেন্দ্রিক সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করা আবশ্যক।
ভারতের বীড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক রূদ্র প্রসাদ প্রধান ব্লু ইকোনমির ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ভারত মহাসাগর সাত কোটি বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এর মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে ৪০টি দেশ। এটি বিশ্বে তেল পরিবহন ও বাণিজ্য রুটগুলোর মধ্যে অন্যতম। তার মতে, ‘ভারত অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্র ও মহাসমুদ্রগুলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে’।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড এর উপ-প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা রাজ জিৎ সিং ওয়ালিয়া বলেন, ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সামুদ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, দূষণ প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংস্থাটি নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে’।
রোসাটমের ব্যবসা উন্নয়ন পরিচালক ইকাতেরিনা লিয়াকোভা বলেন, ‘রোসাটমের জন্য ব্লু ইকোনমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষকরে আর্কটিক অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে। সর্বাধিক অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন এবং অঞ্চলটির বায়োস্ফিয়ার রক্ষার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ’।
তিনি মনে করেন, ‘সরকার, ব্যবসা এবং বিজ্ঞান সম্মিলিতভাবে শুধুমাত্র আর্কটিক নয়, সব সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর জন্য অর্থনীতির একটি মডেল তৈরিতে কাজ করতে পারে’।
রোসাটমের লজিস্টিক ইন্টিগ্রেটর রুসাটম কার্গো গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে। রোসাটম এবার দ্বাদশ বারের মতো এটমএক্সপো আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২২
এসকে/আরআইএস