সাভার, (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন পোশাক কারখানার ট্র্যাজেডির ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে কারখানাটির সামনে পুড়ে যাওয়া দেয়ালে সেই সময়কার সংগ্রহকৃত আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়েছে। সেসঙ্গে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন পোশাক কারখানার দেয়ালে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার, নিহত শাহ আলমের মা সাহারা খাতুন, নিহত শ্রমিক মাহফুজা আক্তারের স্বামী জব্বার, নিহত লিপির মা নসীমন, নিহত আইনালের মা জবেদা, আহত শ্রমিক নাসিমা আক্তার, আশুলিয়া শাখার সভা প্রধান জিয়াদুল ইসলাম ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল হোসেন।
বক্তারা জানান, আজ থেকে ১০ বছর আগের ২৪ নভেম্বর ২০১২, দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে এবং বাংলাদেশে একটি স্মরণীয় দিন তাজরীন গার্মেন্টস। ১০ বছর পার হয়েছে মামলায় দীর্ঘসূত্রতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং স্বজনপ্রীতির দোষে আজও শাস্তি হয়নি তাজরীনের দোষী মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ আর সব দোষীদের। উল্লেখযোগ্য কোনো বদল হয়নি ক্ষতিপূরণের আইন।
ক্ষতিগ্রস্তদের হয়নি যথাযথ পুনর্বাসন। তাই ‘মৃতদের স্মরণ করো, জীবিতদের জন্য লড়াই করো; দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আইন বদল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন চাই’ এমন দাবি করেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি সভাপ্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখ্তার বলেন, বাংলাদেশের ৪০ লাখ শ্রমিকের প্রতিনিধি তাজরীনের শ্রমিকরাও। বাংলাদেশের নাম আর সব শ্রমিকের মতো তাজরীন শ্রমিকরাও সারা দুনিয়ায় পরিচিতি করেছিল। অথচ মালিক, সরকার আর বায়ারের অবহেলা এবং অমনোযোগে প্রাণ হারায় সেই শ্রমিকরা। বিচারহীনতার ১০ বছর বলে দেয় শ্রমিকের জীবন ও স্বপ্নর কোনো মূল্য নেই সরকারের কাছে। দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিপূরণ আইনের বদল ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুর্নবাসন দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, তাজরীনের আগুনে পুড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর ১০ বছরে সেসব দুঃসহ স্মৃতিকে ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে চাই আমরা। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ আমাদের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। কারণ এসব স্মৃতি ইতিহাস, শক্তি ও প্রতিবাদের প্রতীক। তাই ফেলে আসা স্মৃতি থেকে শক্তি নিয়ে দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিপূরণ আইনের বদল, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুর্নবাসন, জীবিত শ্রমিকদের ২৫ হাজার টাকা মজুরি করাসহ নানা দাবিতে আমরা সোচ্চার।
প্রসঙ্গত, তাজরীন দিবসের ১০ বছর ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাজরীন গার্মেন্টসে সামনে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, ঢাকায় পরিবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। বুধবার প্রদর্শনীর ৪র্থ দিন ও শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) তাজরীনের সামনে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এসএফ/এএটি