ফরিদপুর: পচন ধরেছে পায়ে। মাছি পড়ছে পচন ধরা স্থানে।
এতক্ষণ বলছিলাম রিনা (৩০) নামে হতভাগিনী এক রোগীর কথা। যিনি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি আছেন। তবে এখন তার অবস্থান হাসপাতালটির ট্রমা সেন্টারের গেটে। রিনা তার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। তার ডান পায়ে ধরেছে পচন। কিছুদিন যাবৎ সে পায়ে বাসা বেঁধেছে পোকা। দেহে কোনো রকম এক টুকরো পোশাক জড়ানো। তাও মাঝেমধ্যে সে ফেলে দিচ্ছে। পচন ধরা পায়ে পোকা বাসা বাধার পর থেকে তার চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর ডাক্তারদের দায়িত্ববোধের অভাবে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে সে। এমন অভিযোগ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের।
জানা যায়, দুই মাস আগে পায়ে আঘাত পেলে এ হাসপাতালে কে বা কাহারা রিনাকে রেখে যায়। পরে নাসিরউদ্দিন নামে পুলিশের এক সদস্য উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও নার্সদের অনুরোধ করে পায়ে ব্যান্ডিজসহ কিছুটা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, কিনে দেন খবারও। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের অবহেলায় তার (রিনা) পায়ে পচন ধরে।
পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির অর্থোপেডিক্স বিভাগ থেকে ওই হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের গেইটে ফেলে রাখা হয়েছে তাকে। চিকিৎসার অভাবে পচন ধরা পায়ে এখন পোকা বাসা বেঁধেছে। তার পা-টি কেটে ফেললে হয়তো বা সে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে। এমনটাই বলছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী।
তবে, চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করেন হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাহীন জোয়ার্দার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সে হাসপাতালে আসার পর থেকেই আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তাকে ওষুধপত্র ও খাবার দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত টাকা দিয়েও কিছু কিছু সময় খবার ও ওষুধ কিনে দিচ্ছেন বলেও দাবি এ চিকিৎসকের।
তার পা কাটার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ চিকিৎসক বলেন, পা কেটে না হয় দিলাম; তবে তাকে পরবর্তীতে দেখভাল করবে কে? কেউ যদি তার পক্ষে দায়িত্ব নেন, তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় পা না কেটেও পোকা ধরার পর ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগী সুস্থ হন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. দীপক কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে কি করা যায় তা ওই বিভাগের ডাক্তারদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সময় প্রতিবেদক সংবাদকর্মী পরিচয় দিলে; তাৎক্ষণিক হাসপাতালের একজন স্টাফকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় বিষয়টি দেখার জন্য।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কিছু দিন আগে কিছু ওষুধপত্র কিনে দিয়েছিলাম তাকে। কিন্তু, তাকে দেখাশোনার জন্য লোক দেওয়া সম্ভব নয়। যদি, আবার ওষুধ দরকার হয় প্রয়োজনে ওষুধ কিনে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এসআইএ