ঢাকা: যারা শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন করেন, তাদের মধ্যে অনেক বিভক্তি আছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর ও শ্রমিকের সুরক্ষা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), লাউডস ফাউন্ডেশন ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস।
সভায় বক্তারা বলেন, যে দেশে শ্রমিকদের আয়ের দ্বিতীয় উৎস বলে অভিহিত করা হয় সে দেশে কেন শ্রমিকদের আইনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়? দেশে শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ থাকলে আজ ১০ বছর পর এসেও এই অগ্নিকাণ্ডের সুরাহা নিয়ে আলাপ করতে হতো না।
তারা আরও বলেন, তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর পূর্তি এমনই এক পরিবেশে পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে সব ঝুঁকিকে পাশ কাটিয়ে শ্রমিকদের নিয়মিত কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। জীবন ও জীবিকা এ দুয়ের মধ্যে শ্রমিকরা তাদের জীবিকাকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক বলেন, আমাদের গার্মেন্টস মালিকেরা এত বেশি প্রভাবশালী যে, এদের বিচারের আওতায় কখনো আনা যায়নি। এই ব্যর্থতা আমাদের ঘোচাতে হবে। আমরা কথায় কথায় বলি আমরা শ্রমিকদের বন্ধু, কিন্তু আমাদের কাজে সেটা প্রমাণ করে না। গার্মেন্টসে দরজা বন্ধ থাকলে মালিকপক্ষ দায়ী থাকবে, এমন আইন আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দরজা বন্ধ থাকাতেই এত বেশি প্রাণহানি হয়েছে। অথচ এই দরজা খোলা থাকলে এত বেশি প্রাণহানি হতো না। এই অপরাধেরও বিচার করা যায়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন আগে শ্রমিক সংগঠন করেছি, তখন দেখেছি শ্রমিকরা মজুরি ছাড়া অন্য কোনো দাবি করতেন না। শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না। এখন আমাদের শ্রম আইন আছে, নীতিমালার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে, তারপরও আমাদের টনক নড়ছে না। গার্মেন্টস ক্ষেত্রে অনেকগুলো বড় বড় দুর্ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা চাই শ্রমিকদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত হোক। মনে রাখতে হবে শ্রমিকের উন্নয়ন মানে অর্থনীতির উন্নয়ন, কারখানা মালিকদের উন্নয়ন। তাই শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইন করা প্রয়োজন। সরকারকে সেদিকেই নজর দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদেরও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে সেই অধিকার আদায় করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্টের স্টাফ আইনজীবী সিফাত ই নূর খানম ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির আইন কর্মকর্তা হাসিনা খানম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী খান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সভাপতি রহিমা আক্তার সাথী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এসসি/আরএইচ