ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উগ্রবাদ থেকে দূরে থাকেন প্রবাসীরা: গবেষণা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
উগ্রবাদ থেকে দূরে থাকেন প্রবাসীরা: গবেষণা

ঢাকা: অতিরিক্ত আইজিপি ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরোনো। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এ দেশে কোনোভাবেই উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

তাই উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মনিরুল ইসলাম এ কথা বলেন।  

বৃহস্পতিবার ( ২৪ নভেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তিনি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে বলেন, উগ্রবাদ থেকে দূরে থাকেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এর কারণ হিসেবে উঠে আসে বাংলাদেশিদের দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন, দায়িত্ববোধ ও সমাজব্যবস্থা।  

তিনি বলেন, ৮৯ শতাংশ অভিবাসী নিজের বাঙালি সত্তা নিয়ে গর্ববোধ করেন। তবে বেশ কিছু ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানকালীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব, তুলনামূলক কম মজুরি, অসদাচারণ, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার না করা অভিবাসীদের উগ্রবাদে প্রভাবিত করতে পারে।

এ ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্র্যাকের গবেষণায় অভিবাসীদের গন্তব্য দেশগুলোর নিয়ম কানুন, সংস্কৃতি, ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর নিয়মিত অভিবাসীদের খোঁজখবর রাখা, প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া, সামাজিক ও মনস্তাত্বিক সহায়তা দেওয়া, অনলাইনের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা, পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, পুনরেকত্রীকরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়াসহ উগ্রবাদী মতবাদ সম্পর্কে আরও গবেষণা ও করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।

মনিরুল ইসলাম এ গবেষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, গবেষণার প্রাপ্ত সুপারিশগুলোকে নিয়ে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। শুধু সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাজ করতে পারবে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ট লাগবে। গণমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের উপকশিনার মুহাম্মদ হাবিবুন নবী আনিসুর রশীদ বলেন, প্রবাসীরা অনেক সময় ওই দেশের আইনকানুন সম্পর্কে জানেন না। তাদের সচেতন করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) উপপরিচালক জহুরা মনসুর বলেন, বিদেশ পাঠানোর আগেই সরকার অভিবাসীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সেখানে উগ্রবাদ, আইন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে নতুন বিষয়গুলো যুক্ত করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রবাসীরা যেন বৈধ পথে টাকা পাঠান সে বিষয়েও আরও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, অভিবাসীরা যে দেশে যাচ্ছে সে দেশের নিয়ম-কানুন, ভাষা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে যেতে পারে সেই কাজটি সরকার করে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও এ কাজে যুক্ত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, অভিবাসন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিবাসীকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশেষ পঞ্চম এবং রেমিটেন্স গ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতিবছর গড়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোক বিদেশে যান এবং রেমিটেন্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। অভিবাসন খাতকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করতে এ গবেষণা আরও কাজে আসবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, কনস্যুলেট অব দ্য রিপাবলিক অব সিঙ্গাপুর, ঢাকা এর হেড অব মিশন শিলা পিল্লাই; বিএমইটি এর উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম; ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুরুল কাদেরসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
টিআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।