মাদারীপুর: শিবচরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌ রুটের বাংলাবাজার ঘাট কেন্দ্রিক শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছে পদ্মা সেতুর রেলপথ। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথ ইতোমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে।
এ রুটে রেল পথ চালু হয়ে গেছে ঘাট কেন্দ্রিক বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমজীবীরা তাদের উপার্জনের নতুন পথ খুঁজে পাবে। ট্রেন চালু হলে স্টেশন/জংশন কেন্দ্রিক ভাসমান কেনাবেচা বাড়বে। লোক সমাগম হলে আয়ের পথ তৈরি হবে। পদ্মা পাড়ের অসংখ্য শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে আলাপে এ বিষয়টিই উঠে এসেছে।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলাটি ভৌগলিক দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার বেশ কাছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও হচ্ছে শিবচরে। পদ্মা সেতু চালুর পর শিবচর উপজেলার মানুষ রাজধানীর সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ করতে পারছে। এতে করে এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি এসেছে। কিন্তু পদ্মা নদীর বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা অসংখ্য মানুষ এখন বেকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার অংশের কাজের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেল পথের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম, শিবচরের বাঁচামারা ও জাজিরার নাওডোবা সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন রয়েছে জংশন। এর আগে গত ১ নভেম্বর ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চালানো হয়েছে।
রেলপথ সংলগ্ন শিবচরের দত্তপাড়া, পাঁচ্চর, কুতুবপুর, কাঁঠালবাড়ী এলাকার স্থানীয়রা বলেন, পদ্মা সেতুর পর ট্রেন চালু হলে যোগাযোগের আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই রেললাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষ নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে। তাছাড়া ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে রেল চালু হলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কম খরচে মালামাল পরিবহন করা যাবে। এই এলাকার কৃষিজ পণ্য সহজেই বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া যাবে।
তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবীরা রেল কেন্দ্রিক নতুন কাজের সন্ধান পাবে। জংশন এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা হকারি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। পদ্মার ঘাট বন্ধ হওয়ার পর ঘাটের শত শত মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের পেশা হারিয়েছে। অসংখ্য হকার শ্রেণির মানুষ আজ বেকার। তারাও রেল নিয়ে আশায় আছে। নতুন করে জীবিকা নির্বাহের জায়গা তৈরি হবে এই রেল ঘিরে।
পাঁচ্চর এলাকার ঝালমুড়ি বিক্রেতা আল-আমিন জানান, আগে ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। ঘাট বন্ধ হওয়ার পর আয়-রোজগার কমে গেছে। এখন রেল লাইনে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকেলে রেললাইনে অসংখ্য লোকজন ঘুরতে আসে। ভালো বিক্রি হয়। রেল চালু হলে জংশনে, ট্রেনে ঝালমুড়ি বিক্রি করা যাবে। বেচা-কেনাও বাড়বে।
ইস্কান্দার হাওলাদার নামে এক হকার বলেন, রেললাইন আমাদের এলাকার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতুতে গিয়ে মিশেছে। রেল চালু হলে আমরা অল্প খরচে সহজেই ঢাকা যেতে পারবো। মানুষের আয়-রোজগারের নানা পথ চালু হবে। এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী বলেন, রেল চালু হলে এলাকায় আরও পরিবর্তন আসবে। মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়বে। নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাছাড়া যোগাযোগের অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছে এখন। রাজধানী ঢাকা চলে এসেছে ঘরের কাছে। রেল চালু হলে নতুন দিগন্ত খুলবে যোগাযোগের। রেল ঘিরেও স্বপ্ন এই অঞ্চলের মানুষের। আর শ্রমজীবীদের স্বপ্ন বেঁচে থাকার নতুন কাজের জায়গা তৈরির।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এমজে