ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেট-বাদাঘাট চারলেনে ভিত্তিপ্রস্তর আজ

১২ কি.মি সড়কের কাজ শুরু হতেই ১২ বছর!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
১২ কি.মি সড়কের কাজ শুরু হতেই ১২ বছর! সিলেট-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক (লিংক রোড)।

সিলেট: অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেটকে তিলোত্তমা নগর গড়ার পরিকল্পনা হাতে নেন। এই পরিকল্পনার অংশ বিশেষ ছিল সিলেট-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক (লিংক রোড)।

২০১২ সালে শহরতলীর বিমানবন্দর ঘেষা ১২ কিলোমিটার সড়কটির প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন তিনি। যাতে ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো শহরে না ঢুকে ওই সড়ক ব্যবহার করে সরাসরি জাতীয় মহাসড়ক এন-২-তে সহজে পৌঁছে যাবে। এতে করে নগরের আম্বরখানা ইন্টারসেকশনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হবে না। সময় অপচয় ছাড়াও আর্থিক ক্ষতি ও ট্রাকের কারণে ঘটা দুর্ঘটানাও কমে আসবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে যাতায়াতকারীরাও উপকৃত হবেন।  

কিন্তু জীবদ্দশায় দুই মেয়াদেও কাজটি দেখে যেতে পারেননি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।  তিনি আজ প্রয়াত। কেবল আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মুহিতের সেই স্বপ্নের সড়কটি বাস্তবায়ন হতে সময় লেগে গেল একযুগ!   

আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে সড়কটির উদ্বোধন করবেন প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অনুজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

সম্প্রতি এই ১২ কিলোমিটার সড়ক ১২ বছরে না হওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এর কিছু দিনের মধ্যেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, কুমারগাঁও-এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার আরসিসি চারলেন ঢালাই সড়কে ব্যয় হবে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কের বাঁধে মাটির কাজ, সয়েল ট্রিটমেন্ট, রিজিড, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, বাস-বে নির্মাণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পিসি গার্ডার সেতু এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সড়কটি ২০১২ সালে প্রস্তাবনা উঠলেও ২০১৫ সাল থেকে দাফতরিক প্রস্তাবনার কাজ শুরু হয়।  

এত দিন দেরি হওয়ার পেছনে কয়েকবার সিদ্ধান্ত বদল কারণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে ভোলাগঞ্জ সড়কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে, এমনটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে সড়কটির কিছু অংশ চারলেন এবং কিছু অংশ দুইলেন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সাবেক সচিব ছয়লেন করার সিদ্ধান্ত নিলেও কাজ হয়নি।

এখন চারলেন আরসিসি সড়ক করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সড়কের মাঝখানে ডাইভারশন রেখে দুইপাশে ৭ দশমিক ৯/৭ দশমিক ৯ মিটার প্রস্থ রাখা হবে। এরইমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও সড়কের কাজ চলমান অবস্থায় আরও ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।  

তিনি আরও বলেন, আমি ২০০০ সাল থেকে এখানে আছি। তবে প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের এই প্রস্তাবনাটি এতো বিলম্বের নানা কারণ রয়েছে। সব কারণ জানা নেই। তবে আটকে থাকার পেছনে কিছু বিষয় স্পষ্ট করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের দিকে শুধুমাত্র চারলেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কাজের কাজ আর কিছুই হচ্ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সম্প্রসারণের দাবি ওঠে স্থানীয়ভাবে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সড়কটির কাজে গতি আনার চেষ্টা করেন।  

এরপর ২০২০ সালে আগস্টে তৎকালীন যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে তৈরিকৃত প্রস্তাবিত চারলেনের নকশায় সিলেট সওজের ত্রুটিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দল নিয়োগ করে ডিজিটাল সার্ভে (টিবিএম) দিয়ে সংশোধিত নকশা তৈরি করতে সওজ সিলেট কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয় তখন। প্রস্তাবিত নকশা সংশোধন করে ২-৩ মাসের মধ্যে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়ে গেলেও আর কাজ হয়নি।  

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপিত হয়ে অনুমোদন পায়।

সড়কটি এখন বেহাল অবস্থায় আছে। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি ২০১২-১৪ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয়।  

পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চারলেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে সিলেটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। পরের বছর চারলেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা।

সড়কটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ছয় কিলোমিটার কুমারগাঁওয়ে শুরু হয়ে বাদাঘাট দিয়ে অতিবাহিত হয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাদাঘাট লিংক রোডসহ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৭৮০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।