রাঙামাটি: বৈচিত্রময় পার্বত্যাঞ্চল রাঙামাটি ফলমূল এবং জুম চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এখানে এসব ফসলের পাশাপাশি গতানুগতিক সমতল অঞ্চলের ন্যায় অন্যান্য ফসলের চাষ হয় সমানতালে।
পাহাড়ের এ স্বর্ণ ভূমিতে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথা সময়ে ফসল ঘরে তুলে হেমন্তের পিঠা-পুলি উৎসব সাড়াম্বরে আয়োজন করবে কৃষক পরিবার। যে কারণে পাহাড়ের গ্রামগুলোতে বইছে উৎসবের আমেজ, বেজায় খুশি কৃষক-কৃষাণীরা।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলার দশটি উপজেলায় ১০ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক ফলন হয়েছে।
হেমন্তের শিশির ভেজা শীতল কুয়াসা বাতাসে দোলছে পাকা ধানের শীষ, নূয়ে পড়ছে মাটিতেও। আড়ম্বর আয়োজনে নবান্ন উৎসব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কৃষক-কৃষাণীরা। যেসব জমিতে ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে সেইসব জমির ধান কেটে মাঠে শুকানো হচ্ছে। শুকানো হলে সেগুলো আঁটি বেঁধে মাড়াই করা হচ্ছে। ভোর থেকে এসব কাজে ব্যতি-ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
কৃষকরা বলছেন- চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভাল থাকায় এবং রোগ-বালাই কম হওয়ায় আমনের ভাল ফলন হয়েছে।
শহরের রাঙাপানি এলাকার কৃষক সোনামণি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। উৎপাদন ভাল হয়েছে তাই মনে শান্তি লাগছে।
একই এলাকার কৃষাণী হরপতি চাকমা বলেন, জমিতে যে পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়েছে তা দিয়ে পুরো বছর চলে যাবে। এ বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অত্যন্ত ভাল ফলন হয়েছে বলে জানান।
কৃষক চয়ন চাকমা বলেন, জুমের ভাল ফলন না পেলেও আমরা আমনের ভাল ফলন পেয়েছি। যথা সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমনের ভাল ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জেলার দশটি উপজেলায় ১০ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষমাত্রা করা হয়েছিলো। শতভাগ সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে ২ দশমিক ৭৮ হেক্টর জমি থেকে ২৭ হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন উফসি জাতের ধান এবং ১ দশমিক ৪০ হেক্টর জমি থেকে ২৯৪ মেট্রিক টন স্থানীয় ধান পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আদর প্রিয় চাকমা বলেন, চলতি মৌসুমের আমন ধানের ভাল ফলন হয়েছে। যথা সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং পোকা-মাকড়ের কম থাকায় ফলনের বাম্পার হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় ইঁদুরের তেমন কোনো উৎপাত ছিলো না। কারণ আমরা আগে থেকেই ইঁদুর নিধনের ব্যবস্থা নিয়েছি। চাহিদার তুলনায় ফলন ভাল হওয়ায় কৃষক পরিবারগুলোর পুরো বছরের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি জেলার উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটির ভূমি উর্বর হওয়ায় এখানে যা চাষ করা হয় তাই ফলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলায় বৃষ্টিপাত কম হলেও আমনের মৌসুমের আগে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।
তপন কুমার পাল বলেন, সরকার কৃষি নিয়ে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষির উন্নয়নে যত আধুনিক পরিকল্পনা করা দরকার সব করছে। সরকার কোটি-কোটি টাকা খরচ করছে, ভুর্তকী দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এসএম