ময়মনসিংহ: হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে এক কিশোরের ময়নাতদন্ত নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর এবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, দেশ সেরা চিকিৎসার খ্যাতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানে মরদেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তারা।
মমেকের এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। রোববার (২৭ নভেম্বর) কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মমেকের মর্গ পরিদর্শন করে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। সরেজমিনে তিনি ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পান।
দেখা গেছে, হত্যা, দুর্ঘটনা, আত্মহত্যাসহ অ-প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যুর শিকার ব্যক্তির ময়নাতদন্তে গড়িমসি করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বজনরা মরদেহ নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। আছেন বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারাও।
কেউ কেউ রাত থেকে, কেউ ভোর থেকে মরদেহ পেতে অপেক্ষা করে আছেন। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে দিলেও সঠিক সময়ে ময়নাতদন্ত করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের এমন আচরণকে তাই হয়রানী বলে দাবি করছেন তারা।
সকালে মমেক মর্গে গিয়ে দেখা যায় মো. শাহীন মিয়া নামে এক রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মচারী তার স্বজনের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। তার আশপাশে দাঁড়িয়ে, বসে আছেন আরও কয়েকজন। বাবুল ও শপু নামে দুই যুবকও তাদের স্বজনের মরদেহ পেতে অপেক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে মরদেহ পেতে অপেক্ষা করে আছেন তারা। কিন্তু লাশের ময়নাতদন্ত হয়নি।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের শিকার ব্যক্তিদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করেনি। যে কারণেই ভুক্তভোগীরা বিষয়টিকে হয়রানী হিসেবে দেখছেন।
মমেকের মর্গের দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, সদর এলাকার ৩টি লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে একটি লাশ শনিবারের (২৬ নভেম্বর), বাকি দুটো রোববার সকালের। কিন্তু হয়নি। কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্যস্ত, যে কারণে তিনি এখনও হাসপাতালে আসেননি।
মর্গের ডোম ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ছয় ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় আছে। লাশগুলোর মধ্যে একটি ফুলবাড়িয়ার, একটি ধোবাউড়ার, একটি ফুলপুরের ও ৩টি সদরের কিন্তু কিন্তু ডাক্তার না আসলে ময়নাতদন্তের কাজ শুরু করা সম্ভব না। এ সময় বাংলানিউজের প্রতিবেদককে বসে অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক বলেন, মরদেহের সুরতহাল বা প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র হাতে পেলে ময়নাতদন্ত শুরু হবে।
মমেকের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নাহিয়ান বলেন, আমাদের কাজের বিভাগ দুটি। একটি লিগ্যাল, অপরটি অ্যাকাডেমিক। লিগ্যাল সাইট মেনটেইন হয়। কিন্তু চাইলেই সব কাজ সময় মতো করতে পারি না। দিনে একবার ময়নাতদন্তের কাজ করা হয়। হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
এর আগে গতকাল শনিবার হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে কামরান নামে এক কিশোরের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে পরিবার। পরে এ বিষয়ে ‘চিকিৎসক-পুলিশের ঠেলাঠেলি, ময়নাতদন্ত হচ্ছে না কিশোরের মরদেহের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলানিউজ। এ খবরে উপজেলায় সমালোচনা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরে কামরানের ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এমজে