ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পানির দুই সমস্যা’ চাঁচড়ার আশ্রয়ণবাসীর গলার কাঁটা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
‘পানির দুই সমস্যা’ চাঁচড়ার আশ্রয়ণবাসীর গলার কাঁটা!

যশোর: ‘পানির দুই সমস্যা’ যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বৃষ্টি হলেই পানি বারান্দা ছাপিয়ে ঘরে ঢোকে, অন্যদিকে খাবার পানি সঙ্কট- মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রকল্পের ১১২ ঘরের বাসিন্দাদের।

পাশাপাশি কিছু ঘরে ফাটল দেখা দেয়া, রাস্তা না থাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা এবং বহিরাগতদের উৎপাত নিয়েও বিড়ম্বনায় আছেন তারা।

যশোর সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে যশোরের চাঁচড়ায় ১০০টি ঘর ভূমিহীনদের দেওয়া হয়। পরে সেখানে আরও ১২টি ঘর তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন সেখানে মোট ১১২টি পরিবার বসবাস করে। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে; তারাই সেখানে বসবাস করছেন। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শতবর্ষ’ প্রকল্প।

প্রকল্পের আগে সেখানে ঘিঞ্জি ঘনবসতি আর দুর্গন্ধময় পরিবেশ ছিল। যে কারণে স্থানীয়রা সেটাকে বস্তি বলতেন। এখন ঘর নির্মাণের ফলে সেটাই সুদর্শন পল্লী হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেখানে এই পরিবারগুলোর জন্য নির্মিত ঘরের পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র, পুকুর, বৃক্ষরাজি শোভিত সৃজিত বনায়ন, পাকা সড়ক, মসজিদসহ নানা সুবিধা।

তবে যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ায় নির্মিত ‘প্রধানমন্ত্রীর ‘শতবর্ষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ সরেজমিনে ঘুরে বেশকিছু সমস্যার দেখা মিলেছে।   আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুর রহিম (৭০) জানান, প্রকল্পের মধ্যে কোনো রাস্তা ও ড্রেন নেই। তাই বৃষ্টি হলেই পানি জমে, সেই পানি ঘরে উঠে যায়। আর নলকুফের পানির সঙ্গে আয়রন ওঠে। ফলে তা পান করা যায় না। বাইরে থেকে পানি আনতে হয়।
২১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৪০) ডেকোরেশনের কর্মী। তিনি জানান, বৃষ্টি হলেই পানি আটকে যাওয়া তাদের বড় সমস্যা। এখানে কোনো ড্রেন নেই। আর ঘরের মেঝে প্রায় মাটি বরাবর। তাই বৃষ্টি হলেই পানি ঘরে চলে আসে। এখানে ১২টি নলকূপ আছে। কিন্তু সেগুলোর পানি খাওয়া যায় না। আর পানি ব্যবহার করলেও সেই তা আটকে সমস্যা সৃষ্টি করে। দুটি সাবমার্সেবল টিউবয়েল স্থাপন করা হলেও তার একটি নষ্টই থাকে। ফলে খাবার পানি বাইরে থেকে আনতে হয়।

ফতেমার মা গৃহকর্মী রহিমা বেগম (৬০) জানান, চাঁচড়ার এখানেই আগে তারা বসবাস করতেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেয়েছেন। সেখানে দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করছেন। বাকি দুই ছেলে ঘর না পাওয়ায় পাশের এলাকায় বউ-বাচ্চা নিয়ে ভাড়া থাকে। তাদেরও একটা ঘর দরকার।

তুলা মিলের শ্রমিক ৬৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সায়েরা বেগম জানান, বাইরের লোকজন এখানে এসে সমস্যা করে। প্রতিবাদ করায় তার ছেলে রনিকে দেড়মাস আগে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা খুন করেছে। এখন আর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। রাতে আশপাশে মাদক, জুয়ার আসর বসে। আর রাস্তা ড্রেনের পাশাপাশি এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলারও জায়গা নেই। আশ্রয়ন প্রকল্পের উত্তরপাশে ময়লা ফেলা হয়। কিন্তু তা সেখানে থেকে সরানো হয় না। ফলে এই ময়লা থেকে গন্ধ ছড়ায়।

৮০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সবুর গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০) বলেন, ঘর পাওয়ার কিছুদিন পরই ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক অফিসার এসে দেখে গেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

৮৩ নম্বর ঘরের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৭০) জানান, নির্মাণের সময় তারা বলেছিলেন, মেঝে একটু উঁচু করে ঘর বানাতে। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনেনি। মাটির উপরেই ইট গেঁথে ঘর বানানো হয়েছে। এখন বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি চলে আসে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা দিনমজুর মোহাম্মদ ফারুকের স্ত্রী হেনা (৫০) বলেন, বৃষ্টি হলে ঘরের নিচ দিয়ে পানি ওঠে, ওপর দিয়েও পানি পড়ে। বৃষ্টি শুরু হলে বালতি ভরে ভরে ঘর থেকে পানি ফেলতে হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনের দোকানি ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা কাশেম আলী বলেন, প্রকল্পের সামনে পুকুরের পাড়ে যে বসার জায়গা বানানো হয়েছে। তাতে বাইরের লোকজন এসে আড্ডা দেয়। বখাটেরা উৎপাত করে।

যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপ দাশ বলেন, চাঁচড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১১২টি পরিবার বসবাস করে। এছাড়াও সদরে মোট তিনধাপে ৫৪১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৫৫টি ঘর বরাদ্দ এসেছে। এই ঘরগুলো সবই খাসজমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে কোনো জায়গায় রাস্তা ও ড্রেনের সমস্যা রয়েছে। আমরা বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে সেগুলো নির্মাণ করার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময় : ২৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২২
ইউজি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।