ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪২ টাকা দরে চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তবে উদ্ধোধনের প্রথম দিনই কৃষকদের মধ্যে সাড়া না থাকায় উদ্যোগ টির সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা এল.এস.ডি গুদামে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।

জানা গেছে, সরকারি পর্যায় থেকে এ বছর মোট ৫ লাখ টন চাল ও ২ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সরাসরি কৃষক ও চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে মোট ১৩৪৫৯ মেট্রিক টন ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২১১৫ মেট্রিক টন ধান ও ১১৩৪৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য বিভাগ। এসব ধান প্রতি কেজি ২৮ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৪২ টাকা করে ক্রয় করা হচ্ছে।

দুর্ণীতি ও হয়রানী বন্ধ করতে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে এসব চাল কিনছে খাদ্য বিভাগ। এই অ্যাপস ব্যবহার করতে একজন কৃষককে একটি মোবাইল ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি দিয়ে অ্যাপসে নিবন্ধন করতে হবে। তবে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ৩ জন মিলার ও তাদের প্রতিনিধি কে দেখা গেলেও কৃষকদের দেখা মেলেনি।
 
জেলার শিবগঞ্জের পিঠালীতলা গ্রামের কৃষক আ: লতিফ জানান, সার, সেচ, শ্রমিক সহ সব কিছুর দাম বাড়লেও ধানের দাম বাড়ছেনা। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে কৃষক বাঁচবেনা।

অপর কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, অ্যাপস কি জিনিস। আমরা বুঝিনা। আর খোলা বাজারের থেকে কম দামে সরকার ধান কিনছে। তাই সরকারের কাছে ধান বেঁচে লাভ কি?

এ বিষয়ে জেলা কৃষি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ধান সংগ্রহের পদ্ধতিটি সুন্দর হলেও ধানের মূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।  

তিনি জানান, জমি বর্গা নিয়ে একজন কৃষকের ১ কেজি ধানের উৎপাদন খরচ আসে ২৯ টাকা ৭১ পয়সা। আর নিজের জমি হলে আসে ১৮ টাকার উপরে। এতে করে কৃষকরা সরকারকে ধান না দিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর এক শ্রেনীর মুনাফালোভি মিলাররা কৃষকদের লোভ দেখিয়ে সরকারী রেটের চেয়ে সামান্য বেশি দাম দিয়ে কিনে গুদাম জাত করছে। পরে তারা ইচ্ছামত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ জন্য কৃষক বাঁচাতে তিনি কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ কমানো বা কৃষিপণ্যের দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানান সরকারকে। একই সাথে সরকারের দেওয়া অনুদান প্রকৃত কৃষকদের কাছে পৌছাতে কৃষি বিভাগকে আরও স্বচ্ছতা আনতে হবে বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রসাশক এ কে এম গালিব খান বলেন, ধান কেনার মূল লক্ষ্যই থাকে একটা প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে কৃষক ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে। এছাড়াও ধান চাল সংগ্রহে যেন কোন ধরণের সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করা হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে হয়রানি ও প্রতারণার সুযোগ না থাকায় আশা করা যাচ্ছে এবারের চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। আর এর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী এ দাম সময়োপযোগ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ধানের মূল্য জাতীয়ভাবে নির্ধারণি করা হলেও ধানের দামের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের নজরে আনতে হবে।

এ সময় স্থানীয় সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার, সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন, খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু এরশাদ, জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সদস্য মো. আকবর হোসেন সহ জেলা প্রশাসন এবং খাদ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ডিলার ও কৃষকদের কাছ থেকে এসব ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে আগামী বছরের ০২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় ধান এবং সদর ও গোমস্তাপুর উপজেলার সিদ্ধ চাল ক্রয় করবে খাদ্য বিভাগ। জেলার ১৪৩টি অটো ও হাসকিং রাইস মিল এবং কৃষকদের কাছ থেকে এসব চাল সংগ্রহ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।