ঢাকা: সীমান্তের ওপার থেকে নিক্ষেপিত গোলা ও মিয়ানমারের ড্রোন-হেলিকপ্টারের আকাশসীমা অতিক্রমের বিষয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, তারা আর আকাশসীমা অত্রিক্রম করবে না।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে অনুষ্ঠিত ৮ম সীমান্ত সম্মেলন পরবর্তী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
৪ দিনব্যাপী মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এই সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেন। অপরদিকে ডেপুটি চিফ অব মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের পুলিশ মেজর জেনারেল অং নেইং ঘু-এর নেতৃত্বে সম্মেলনে অংশ নেন দেশটির ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
বিজিবি ডিজি বলেন, আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বৈঠকে উত্থাপন করেছি। আমরা তাদের বলেছি, মিয়ানমারের যদি সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোন উড্ডয়নের প্রয়োজন হয় বা হেলিকপ্টার ইউটার্ন করার প্রয়োজন হয়, সে তথ্য আমাদের দিতে। যেন আমরা ওই দিনগুলোতে লক্ষ্য রাখতে পারি যে, কোনো ধরনের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ঘটছে কি না। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে না।
‘এছাড়া, স্থল মাইন বিস্ফোরণে বেশ কিছু বাংলাদেশির হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাদের দেশের নাগরিকও হতাহতের শিকার হয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, অসতর্কাজনিতভাবে বাংলাদেশ বা আপনাদের নাগরিক এর সংস্পর্শে এলে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং তারা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা যৌথভাবে এটা পর্যবেক্ষণ করব। ’ যোগ করেন তিনি।
বিজিবি ডিজি আরও বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার পরে সীমান্তরক্ষী পর্যায়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছে। আমার মনে হয় যথাযথ পদক্ষেপের কারণেই পরবরবর্তিতে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তারাও আশ্বস্ত করেছেন তাদের এসব অভ্যন্তরীন বিষয়ে যেন খেয়াল রাখবেন। স্থল মাইন অপসারণ ও কাটাতারের বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি সমাধান হলে আমরা যৌথভাবে স্থলভাগে টহল দিতে পারবো। আমরা আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা চোরাচালান, মানবপাচারের মতো সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হব। এ বিষয়ে আমরা মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যোগাযোগ আরও জোড়ালো, ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে উল্লেখ করে তিনি প্রত্যাশা করেন এর মাধ্যমে গ্রাউন্ড পর্যায়েই অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব হবে।
বলেন, আমরা যোগাযোগটা জারি রাখতে চাই উল্লেখ করে বিজিবি প্রধান বলেন, উভয় দেশের সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান পরিচালনারও বিষয়ে একমত হয়েছে তারা। কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন যেন সীমান্ত অতিক্রম করে একে-অপরের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে এজন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা ‘রিয়েল টাইম ইনফো শেয়ার’ করতে পারবো।
মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, মাদক কোন অবস্থান থেকে কোন দিকে যাচ্ছে, এ বিষয়গুলো আমরা তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। তারাও পাওয়ার পয়েন্টে দেখিয়েছে। তারাও সমানভাবে মাদকে আক্রান্ত। তারা চান যৌথভাবে কাজ করে মাদকের রুট যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করবো। আমরা বিওপি পোষ্টের মাধ্যমে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি করতে বলেছি, যার মাধ্যমে আমরা মাদক কারবারিদের শনাক্ত করতে পারবো। মাদকের ফ্যাক্টরির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ধ্বংস করার জন্য বলেছি।
যৌথ টহলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্তে যৌথ টহলের বিষয়ে আশ্বাস নয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা শিগগিরই শুরু হবে। আমি চাই এটাকে চলমান রাখা গেলে গ্রাউন্ড লেভেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি যোগাযোগ বাড়ানো গেলে এটি সম্ভব হবে, জোর দিয়ে বলছি আমি বাড়াবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় অবস্থান সবগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। সবগুলোর বিরুদ্ধেই জিরো টলরেন্স রয়েছে। এরা যেন আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য মিয়ানমার সীমান্তে ছয়টি পোস্টে এক প্লটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন আছে। যেন সন্ত্রাসীরা পাসিং বা অন্যান্য অপরাধ না হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
পিএম/এসএ