ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | হাসনাত শোয়েব

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | হাসনাত শোয়েব ছবি: বাংলানিউজ

কবি হাসনাত শোয়েবের জন্ম ০৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮, চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর, বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা। তার প্রকাশিত বই সূর্যাস্তগামী মাছ (মেঘনাদ প্রকাশনী, ২০১৫)। প্রকাশিতব্য বই- ব্রায়ান অ্যাডামস ও মারমেইড বিষ্যুদবার (জেব্রাক্রসিং, ২০১৭)।

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি হাসনাত শোয়েবের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।


প্রিয় পাঁচ কবিতা

ক্ষত-৩
ঘাসের ভিতরে চ্যাপলিনকে লুকিয়ে রেখেছি বহুদিন।

সেল্টা ভিগোর বিমান বন্দরে ভ্রমণকালীন বিরতিতে দেখা হয়ে যায় জীবনানন্দের সাথে। সেকি তুমুল আড্ডা! অথচ ঘাস এবং কুয়াশা ছাড়া জীবনানন্দের অন্যকোন শব্দের অর্থই চ্যাপলিন বুঝতে পারেনি। সে নিজে শুধু বলতে পেরেছিল উই লিভ ইন পোস্টমডার্ন টাইম। অতপর দীর্ঘ নীরবতা! নিঃসঙ্গ দেবদারুর গল্পটা জীবনানন্দ আর তুলতেই পারেনি। টেলিগ্রাফের তার বেয়ে নেমে আসা সন্ধ্যাটাই যখন পুরো সেল্টা ভিগো ছেয়ে যায় তখন দ্রুতগামী দুই বিপরীত ট্রামে দুজন উঠে পড়ে।

কালো ঘোড়া
প্রিয়তমা রাফালা, পিতার মৃত্যুতে বেজে ওঠে বিষণ্ণ রেবাব। তোমার সুরে ঢেকে গেছে পীতবর্ণ মানুষের চোখ। হরিণীর মাতম শেষে চোখ মুছে দূরের জঙ্গল। কালো ঘোড়াটির নাম কে যে হায় রেখেছিলে মহামতি জিব্রাইল। ময়দানের পাতারা এখনো উড়ে উড়ে গান গায়, খায়, ঘুমায়।
তবুও তুমি কে, যে এজিদের নামে বাজাও রুকবানি রাগ।

পোষা মোরগের বিষণ্নতা
সারি সারি লাল মোরগ আমাদের দিকে ছুটে আসছে। যাদের চিবুক জুড়ে বিষণ্ণতা। মোরগের চিবুকে হাত রাখলে মানুষের পাকস্থলীর ওজন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। সেইসাথে বিষণ্নতারও। পোষা মোরগের চিবুকে হাত রেখে বাবা একদিন বলেছিলো

-যীশু মোরগ ভালোবাসত। কারণ তার আছে সংখ্যা সম্পর্কিত যাবতীয় ধারণা।
-পাখিদের মধ্যে মোরগ সবচেয়ে কাছে থাকে মানুষের।
-সে পাকস্থলীর বেদনা বুঝতে পেরেছিলো।
-তবে ছুরির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মানুষ কতটুকু জানে?
-ঠিক ততটুকু, যতটুকু মানুষ মাংসের ক্ষেত্রফল আঁকতে পেরেছিলো।
-কনকের মাংসে মৃত্যুর দাগ ছিলো সেটা তুমি বুঝতে পারোনি।
-দ্বিপ্রহরের যেকোন মৃত্যু গণনা অযোগ্য। এমনকি আমাদের প্রিয় মোরগেরও।

ফ্রেগরেন্স অব ইয়াবা
রুম নাম্বার ৪৪৫, উড়িয়ে দাও তোমার মখমলে ফেরেশতা। পশমাবৃত উইকেন্ডের গায়ে ফ্রেগরেন্স অব ইয়াবা। তোমরা কেউ এগিয়ে এসে বিউগল তুলে নাও। বাজাও পরমগীত সলোমন। ছায়ার ভিতর মেরুন অন্ধকার। আর শিরার ভিতর সিরিঞ্জ ভর্তি রঙিন বিষাদ। ওহে ফেরেশতা, চোখে এবার কিছু ফ্রেগরেন্স জড়িয়ে নাও। শুয়ে পড়ো কোমল গান্ধর্বে।

সিরাজ তুমি একা
গ্রিনিচ মানসময় তিনটা কুড়ি মিনিট। এরপর তীব্রভাবে ঘুমানোর ভঙ্গিমা। সে ডাক দিয়ে বলে এসো, চিতাবাঘের বুকে মাথা রেখে ঘুমাই এবার? ডোরাকাটা স্বপ্নের দিকে হাঁটি? দুপুর ক্রমশ বিকেলের দিকে ভাঁজ হতে থাকে। তার বুকে কেবল আলিবর্দি খাঁর জন্য লুকোনো যন্ত্রণা। হঠাৎ কেউ ডেকে তুলে; ঘুম থেকে জেগে সে বলে- সিরাজ তুমি বড় একা, আমিও!


কবিতার পিছনের গল্প
কবিতা ও তার পিছনের গল্প নিয়ে আসলে লেখা যায় কিনা আমি ঠিক নিশ্চিত না। কবিতা আমার ক্ষেত্রে একেবারেই অবচেতন মন থেকে আসা কোনো বিষয়। তাই ঠিক গল্প দিয়ে একে ব্যাখ্যা করা কতোটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমার অনেকগুলো কবিতা হাঁটতে হাঁটতে, গাড়িতে বসে, খেতে খেতে লেখা। লেখা মানে ঠিক লেখা না, ধারণাটা আসে কিংবা কল্পনা, পরে তাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া। ঠিক এভাবেই এসেছিল ‘ক্ষত-৩’ কবিতাটা। আমি তখন চট্টগ্রামে বাতিঘর বইয়ের দোকানে চাকরি করি। একদিন দুপুরবেলা খেতে যাবো, তখনই এই কবিতার প্রথম লাইনটা মাথায় আসে। ‘ঘাসের ভিতরে চ্যাপলিনকে লুকিয়ে রেখেছি বহুদিন’। এরপর যেতে যেতে বাকিটাও মাথায় চলে আসে। আলীর হোটেলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে খেতে পুরো কবিতাটা মাথায় তৈরি হয়ে যায়। যা পরে ফোনের মেসেজে এবং আরও পরে কম্পিউটারে লিখে ফেলি।

‘কালো ঘোড়া’ কবিতাটার গল্প বরং একটু কাব্যিক। ‘বিষাদ সিন্ধু’ মীর মোশাররফ হোসেনের বিখ্যাত উপন্যাসের অনেকদিন পর শামীম আহমেদ লিখেছেন ‘বিষাদ বিন্দু’, যা মূলত ইতিহাসের খলনায়ক এজিদকে কিছুটা মানবিক জায়গা থেকে বিশ্লেষণ। তার মৃত্যুর সময় কিংবা পরে তার মেয়ে রাবাদার রেবাব বাজানোর যে বর্ণনা, তা সত্যিই অসাধারণ। সেই বইটি পড়ার অভিজ্ঞতা থেকেই এই কবিতাটি।  

‘পোষা মোরগের বিষণ্নতা’ আমার প্রকাশিতব্য বইয়ের কবিতা। আমি কোথাও পড়েছিলাম কিংবা আমার মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, যীশু মোরগ ভালোবাসতেন। আমি ঠিক এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। আবার এমনও হতে পারে বিবিলিক মিথে মোরগ একটি সিগনিফিকেন্ট প্রতীক। তবে যাই হোক, এরকম একটি ধারণা থেকেই এই কবিতাটির উদ্ভব।

‘ফ্রেগরেন্স অফ ইয়াবা’ কবিতাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে বসে লেখা। সেই রুমের নম্বরও ছিলো ৪৪৫। তখন কেবল চিটাগাং থেকে ঢাকা এসেছি। প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে এই কবিতা লেখা। সম্ভবত ঢাকায় এসে লেখা এটা আমার প্রথম কবিতা।  
 
কিছুদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। এক দুপুরে খাওয়ার পর হঠা‍ৎ টিভিতে দেখলাম ‘নবাব সিরাজউদ্দোল‍া’ দেখাচ্ছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো সিরাজদ্দৌলা প্রচণ্ড একা এবং আমিও তার মতো একা। সেই ভাবনা থেকেই তখনই ‘সিরাজ তুমি একা’ কবিতাটা লেখা।

যোগাযোগ

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ