ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

কিসের জন্য বিএনপির এত লাফালাফি, প্রশ্ন শেখ হাসিনার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
কিসের জন্য বিএনপির এত লাফালাফি, প্রশ্ন শেখ হাসিনার

ঢাকা: ১০ ডিসেম্বরের হুঁশিয়ারি, বর্তমান সরকারের পতন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা-সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। কিন্তু এ দলটি ২০০৮ সালে জন সমর্থন হারায়।

২০১৪ সালে তারা নির্বাচন করেনি। আগে-পরের দুটি বছরে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসসহ নানা অরাজকতার অভিযোগ ওঠে। মাত্র তিন ভোট বেশি পাওয়ায় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিডার অব দ্য অপজিশন হওয়ার সুযোগ পান। এমন ফলাফলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা লাফালাফি করেন। কিসের জন্য তাদের এমন লাফালাফি, জানতে চান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ১৫) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহিলা লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। সেখানে বিএনপির সমালোচনার সময় প্রশ্ন করেন, দলটির নেতারা কি নিয়ে এত লাফান।

সম্মেলনে ১০ ডিসেম্বর দেশের জনগণ বিএনপির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি জানি ১০ তারিখে তাদের (বিএনপি) অনেক ঘোষণা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। অগ্নিসন্ত্রাসী, ভুয়া ভোটার লিস্ট করায় শুধু এই নির্বাচনই (২০১৮) মানুষ প্রত্যাখ্যান করেনি, ১৯৯৬ সালেও বিএনপি ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছিল।

দলটির সমালোচনায় তিনি আরও বলেন, বিএনপি জনগণকে পরোয়া করে না। ওরা ক্ষমতায় গেলেই নির্বাচন নিয়ে, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এটা বিএনপির চরিত্র। তার কারণ একটাই, ওরা তো গণমানুষের দল না। ওরা মানুষকে পরোয়া করে না। ক্ষমতা ওদের কাছে ভোগের বস্তু, লুটের সুযোগ, লুটের মাল। আর বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাছে কিছুই না।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। তারই হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। কাজেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি কয়টা আসনে জিতেছে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সে বছর নির্বাচনে আমরা জয় লাভ করি। আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক- কোনোভাবেই ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেছে? ওঠে নাই। তাহলে নির্বাচনের ফলাফলটা কি ছিল। নির্বাচনের ফলাফল অনেকে ভুলে গেছে। সেই ৩০০ সিটের নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পেয়েছিল?

বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করলে মনে হয় ভুলেই গেছে। মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছিল বিএনপি। মাত্র ৩০টি সিট! আর জাতীয় পার্টি পায় ২৭ সিট। তিনটা সিট বেশি পেয়েছিল বলেই খালেদা জিয়া লিডার অব দ্য অপজিশন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। জাতীয় পার্টি যদি আর তিনটা, চারটা সিট পেতো তাহলে খালেদা জিয়া তখনই বিরোধী দলীয় নেতা হতে পারতো না। এটা হলো বাস্তবতা। বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করলেই হয়- এত যে লাফালাফি কিসের জন্য। ২০০৮ এর নির্বাচনেই তো এই রেজাল্ট। তাহলে আপনারা কি নিয়ে লাফান?

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০১৪ সালে তো ইলেকশন করলোই না, বাধা দেবে বলে শুরু করলো অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩-১৪-১৫ সালে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। কত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদা জিয়া তার গুলশানের অফিসে বসে অবরোধ ডাকলো। তার আন্দোলন মানে মানুষ পুড়িয়ে মারা।

এ সময় বিএনপির জুলুম-অত্যাচারের সঙ্গে একাত্তরের কোনো তফাৎ দেখেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন। ২০০১ পরবর্তী বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর কারও চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুঁড়া গুঁড়া করে দিয়েছে, জেলে নিয়ে গেছে, একেকটা নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিয়েছে। হয়রানির চরম অবস্থা। সারা বাংলাদেশে ঠিক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে এ দেশে নারীদের ওপর অত্যাচার করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে যখন ক্ষমতায় এলো মনে হলো যেন সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই অত্যাচার-গণহত্যারই যেন পুনরাবৃত্তি।

শেখ হাসিনা বলেন, এদের দুঃশাসন চরম পর্যায়ে। আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে যেতে পারতাম না। রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। যুব মহিলা লীগ করার পর সব বাধা অতিক্রম করে আমার এই মেয়েরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে। এই মেয়েদেরও কিন্তু ওরা ছাড়েনি! একদিকে পুলিশ বাহিনী, আরেকদিকে ছাত্রদল; বিএনপির গুণ্ডা বাহিনী। অকথ্য নির্যাতন করেছে আমাদের মেয়েদের ওপর। তারা যে অত্যাচার করেছে, আমরা কিন্তু তার কিছুই তাদের ওপর করিনি। আমরা প্রতিশোধ নিতে যাইনি, দেশের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহিলা লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে এদিন সহযোগী সংগঠনটির নতুন সভাপতি ও সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। যুব মহিলা লীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শারমিন সুলতানা লিলি। নতুন এ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য দেন যুব মহিলা লীগের বিদায়ী সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।