ফরিদপুর: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হাওয়া বইছে ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা উপজেলা) আসনে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ফরিদপুরের সালথার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঝুঁকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে।
এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন শক্তিশালী দুই প্রার্থী, প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। যিনি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। অপর শক্তিশালী প্রার্থী বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া।
সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এ আসনটিতে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, সংসদ উপনেতাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতেন, তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকতেন। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য তথা বর্তমান নৌকার প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী মানুষকে তেমন মূল্যায়ন করতে চান না। আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও অভিমানী নেতাদের খোঁজখবর নেন না। তার আশপাশে হাইব্রিডরা ঘোরাঘুরি করেন। আর হাইব্রিডদের ভিড়ে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়নের খোঁজে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে ঝুঁকছেন।
এ পাল্লায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যোগ দিয়েছেন-সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া, উপজেলাটির সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান ওহিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হাসান খান সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী, অপর আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মিয়া, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ফরিদুজ্জামান ফরিদ, দপ্তর সম্পাদক মজিবুল হক, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান বাবু, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লেবু মোল্লাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা।
এছাড়া প্রতিদিনই নতুন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়ার ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন উপজেলাটির আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা আ'লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল হাসান খান সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বর্তমান এমপি ও নৌকার প্রার্থী লাবু চৌধুরী দলীয় কোনো সিদ্ধান্তে কিংবা কোনো কাজে আওয়ামী লীগ ও আমাদের মতামত নেন না। আমাদের মূল্যয়ন করেন না। ডাকেনও না। তাই, আমরা নৌকার বিপক্ষে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকার পক্ষেই। তবে, নৌকার প্রার্থীর অবমূল্যায়নে স্বতন্ত্রপ্রার্থী জামাল হোসেন মিয়ার ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছি। তিনিও আওয়ামী লীগের লোক।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কোনো নেতাকর্মীদেরই মূল্যায়ন করেন না বর্তমান এমপি লাবু চৌধুরী। তাই আমরা নৌকার বিরোধিতা নয়, আমরা প্রার্থীর বিরোধিতা করছি। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়ার পক্ষে কাজ করছি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি সালথা-নগরকান্দার সন্তান। তাই আমি বিগত দিনে এ দুই উপজেলার মানুষকে ভালোবেসে সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম ও আছি। তাদের বিপদে-আপদে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি।
তিনি বলেন, এ দুই উপজেলার মানুষ বর্তমান এমপি লাবু চৌধুরী ও তার লোকজনের দ্বারা নির্যাতিত, অবহেলিত। তাই, এ নির্যাতন ও অবহেলা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।
ফরিদপুর-২ আসন ছিল একটি চক্রের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে এ স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, যারা এলাকায় কোনো উন্নয়ন করেনি। তারা শুধুমাত্র লুটপাট করেছে। ফলে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদনাম হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের এ বদনাম ঘোঁচাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালোবেসে আমার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। ইনশাল্লাহ বিজয়ী হবো আমি।
জামাল হোসেন মিয়া বলেন, আমি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নয়, নির্বাচন করছি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
জামাল হোসেন মিয়া ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকও।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স অর্জন করা জামাল হোসেন মিয়া বর্তমানে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং জারিন কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।
এছাড়া তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালক, ফরিদপুর জেলা শেখ জামাল ক্রীড়া চক্রের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সদস্য, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জামাল হোসেন মিয়ার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সহিদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন নগরকান্দা উপজেলার কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া তিনি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, তালমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পাঁচবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নগরকান্দা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জামাল হোসেনের মা দেলোয়ারা বেগমও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তালমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তার ভাই কামাল হোসেন মিয়া। বোন রিক্তা আক্তার নগরকান্দা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
জেএইচ