বরিশাল: দিন যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, ততোই প্রচার-প্রচারণার সময় কমে আসছে। এ অবস্থায় কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছে বরিশালের ছয়টি আসনের ৩৫ জন প্রার্থী।
আলোচিত এ আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পরে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে ছিল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। এরপর জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় মাঠ অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রচারণার মাঠ দাবড়ে বেড়ানো দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত অপর স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপনই যেন এখন অস্বস্তির কারণ নৌকার শিবিরে।
বরিশাল সদরের ভোটাররা বলছেন, যদি ভোট প্রয়োগে কোনো বাধা না আসে তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাকের সঙ্গে এ আসনে নৌকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আর যদি সাদিক আব্দুল্লাহ প্রার্থিতা ফিরে পায় তাহলে ভোটের লড়াইটা ত্রিমুখী হতে পারে, সেই হিসেবেও ট্রাক ভালো অবস্থানেই থাকবে।
নগরের খান সড়কের বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজ মুখে বলে গেছেন, নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুককে সৎ ও ভালো লোক। এ নিয়ে ভোটারদেরও হয়তো সন্দেহ নেই, কারণ গত ৫ বছরে তার তেমন কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। আবার ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপন কেমন লোক সেটাও সবাই জানেন। করোনার সময় ব্যক্তি উদ্যোগে বরিশালবাসীর পাশে থাকার পাশাপাশি তিনি বিনে পয়সায় হাজার হাজার লোকের চোখের চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছেন। অসহায় নারীসহ পরিবারের পাশেও তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন বটবৃক্ষের মতো। এ অবস্থায় বরিশালবাসীও তাকে ভালো জানেন। যেক্ষেত্রে উভয়কেই আলাদা আলাদা কারণে পছন্দ করেন ভোটাররা। এখন ভোটার উপস্থিতি ও অবাধে ভোট প্রয়োগ করতে পারলে দুজনের লড়াই শেষে ফলাফল বলে দিবে জয়ের হাঁসি কে হাসবে।
তবে সাদিক আব্দুল্লাহ মাঠে থাকলে হিসেব ত্রিমুখী অর্থাৎ ভিন্ন হতো বলে দাবি করে সদর উপজেলার চরবাড়িয়ার বাসিন্দা রাসেল হোসেন বলেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কর্মীবান্ধব হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের যে সমর্থন তার রয়েছে, নিঃসন্দেহে তা মাঠে থাকা অন্য কোনো প্রার্থীর নেই। আবার গত সংসদ নির্বাচনে গোটা বরিশালবাসী দেখেছে সাদিক আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুকের বিজয়ে দৃশ্য। আর এবার সেই সাদিক আব্দুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার পাশে নেই।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাদিক আব্দুল্লাহ ফিরে এলেও নৌকার অস্বস্তি, আবার না ফিরে এলেও যে তা কাটবে এমন নয়। কারণ সাদিক বিহীন মাঠে ট্রাকও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। প্রচারণার মাঠে ইতোমধ্যে রিপন ও তার কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভেদে এ কাজটি কঠিন হয়ে যাচ্ছে নৌকার জন্য। তার ওপর ট্রাকের প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া ও কর্মীদের হুমকি ধামকি দেওয়ায় ট্রাকের আলোচনা তৃণমূলে আরও বেড়েছে।
ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ট্রাকের সালাহউদ্দিন রিপনও কম ভোট পাবেন না জানিয়ে এই কর্মজীবী বলেন, অবাধ ভোট হলে এখন ট্রাকই নৌকার যত শঙ্কা।
এদিকে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিপনও সুষ্ঠু ভোট হলে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পাবেন জানিয়ে বলেন, বাধা-বিপত্তির পরও এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আমি যাইনি। সব জায়গাতে মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। তাতে জয়ের বিষয়ে আমি আশাবাদী। তবে প্রশাসন যেভাবে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিচ্ছে সেটি ৭ তারিখ ভোটের দিন পর্যন্ত বজায় রাখতে হবে।
আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় সাধারণ মানুষ ভোট দেবে বলে আশাবাদী জাহিদ ফারুক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২৪
এমএস/এসআইএ