ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

‌‘বাংলাদেশ কারো পৈত্রিক বা শ্বশুরের সম্পত্তি নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪
‌‘বাংলাদেশ কারো পৈত্রিক বা শ্বশুরের সম্পত্তি নয়’

ঢাকা: বাংলাদেশ কারো পৈত্রিক বা শ্বশুরের সম্পত্তি নয় বলে মন্তব্য করে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. এস এম আলতাফ হোসেন বলেছেন, এটা বীরের দেশ। এই বীরের দেশে যা-তা করবে এটা হতে দেওয়া যায় না।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘একুশের উত্তরাধিকার এবং আজকের উপলব্ধি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম।

সভায় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।  

আলোচনা সভায় অ্যাড. এস এম আলতাফ হোসেন বলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশের যে ভাগ হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। যার কারণে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি ভাষার জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে। এই ভাষা আন্দোলনে অনেক লোক, অনেক ছাত্র নেতা, মেধাবী লোকজন প্রাণ দিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের যে ধারা, সেই ধারায় আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের হাজার হাজার কর্মী মৃত্যুবরণ করেছে, অনেকে আহত হয়েছে, বিভিন্নভাবে নিহত হয়েছেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। একটিমাত্র আশা এই দেশ সুন্দরভাবে, স্বাধীনভাবে চলবে এবং হওয়ারই কথা। কারণ আমরা এই দেশ যুদ্ধ করে পেয়েছি। কেউ এটা পৈত্রিক সম্পত্তি বা শ্বশুরের সম্পত্তি হিসেবে পায়নি। আমরা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। এটা বীরের দেশ। এই বীরের দেশে যা-তা করবে এটা হতে দেওয়া যায় না। কাজেই ড. কামাল হোসেন স্যারকে সামনে রেখে বলতে চাই। আপনার এই কথা আমাদের মনে থাকবে, অসুস্থ মাকে সুস্থ করার জন্য মাঠে থাকতে হবে। আমরা এখন যারা গণফোরাম করি, তারা সবাই মাঠে আছি এবং থাকবো। এই প্রতিজ্ঞা করি।

তিনি আরো বলেন, আজকে খুব দুঃখ লাগে, ১৯৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। আর স্বাধীন দেশে আজকে মুক্তিযুদ্ধের একটি ব্যানার লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজ করবে, এটা হতে দেওয়া যায় না। আমরা সেই সুযোগ কাউকে দেব না। এই দেশ স্বাধীন করেছি আমরা। এই দেশে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা থাকবে, তাদের পরিবার থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে যাবো।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আমরা রক্তের বিনিময়ে যেটা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, তার একটা ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দিনটির মর্যাদা রক্ষা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে যে শক্তি ছিল, সেটাকে বজায় রাখতে আমরা সবাই চেষ্টা করে যাবো। ঐক্য আর শক্তির মধ্য দিয়েই এই মর্যাদা ধরে রাখা সম্ভব হবে।

দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক মো. আবু সাঈদ খান বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা ও শোষণ মুক্তির আকুতি ছিল। গণতান্ত্রিক চেতনাও ভাষা আন্দোলনের মধ্যে লুক্কায়িত ছিল। ১৯৫২ সালে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছি ১৯৭১ সালে আমরা তা অর্জন করেছিলাম। দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে সেই অর্জন অনেকটাই ছিনতাই হয়ে গেছে। এখন আগের দিনই নির্বাচনের ফলাফল লেখা হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গণফোরাম বা কিছু বাম দল ধারণ করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি এর ধারেকাছেও নেই।

পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, গত ১৭ বছরে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। আগে স্লোগান উঠতো, ঢাকা না পিন্ডি? এখন স্লোগান উঠে, ঢাকা না দিল্লি।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বায়ান্নতে একদল দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়ে লড়াইয়ের সূচনা করেছিলেন। পাকিস্তানে ভোটাধিকার ছিল না, ভোটে জয়ী হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হয়নি, সে কারণেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু আজকে নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নির্বাচন হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষকে জেলে রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪
এসসি/নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।