ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

মুজাহিদ-সাঈদীকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ

সাঈদুর রহমান রিমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০
মুজাহিদ-সাঈদীকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ

ঢাকা: মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের রিমান্ডে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ থাকায় অন্য আসামি জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজও আনা সম্ভব হয়নি।

তাকে শনিবার দুপুরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।

পল্টন থানায় দায়ের করা গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের উপর হামলা চালানোসহ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি সংক্রান্ত মামলায় আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 আজ শুক্রবার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন চলছে।
 
মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (দক্ষিণ) উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “ডিবি হাজতে সাধারণ আসামির মতোই মুজাহিদ ও সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়ে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর পৌনে ১২ টা পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ”

এ সময় পল্টন থানার সংশ্লিষ্ট মামলার (নং-৩৭ তাং ১৭-২-২০১০ ইং) তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জিল্লুর রহমানসহ জিজ্ঞাসাবাদ দলের অন্য তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে মনিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, “জুমা’র নামাজ ও দুপুরের খাবার-বিরতি শেষে আবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। ”

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৬ মিনিট থেকে রাত পৌনে ১১ টা পর্যন্ত মুজাহিদকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ বোধ করায় কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২ টা থেকে শুরু হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ।

ডিবি সূত্র জানায়, রাত সোয়া ২টার পর উভয়কে হাজতখানায় ঘুমাতে বলা হয়।

রাতে দুই নেতাকে পৃথক পৃথক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও আজ সকাল ৯ টা থেকে উভয়কে একসঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, মুজাহিদ ও সাঈদীকে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পল্টন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের গাড়ি ভাংচুর, পুলিশকে হামলা-মারধোর ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালানো নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।

এ দুই জামায়াত নেতার  কাছে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা ছিল: জামায়েতের হাইকমান্ডের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া জামায়াত-শিবিরকর্মীরা সাধারণত হামলা-ভাংচুর-অরাজকতা সৃষ্টির মতো কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ায় না। সেক্ষেত্রে পল্টন এলাকার অরাজকতা চালানোর নির্দেশ হাই কমান্ডের কোন নেতা দিয়েছিলেন ?

এছাড়া তারা প্রশ্ন করেন,‘দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্তমূলক যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তা কি আপনারা যৌথ আলোচনার মাধ্যমে নিয়েছিলেন ? না কি আপনাদের কারোর একক সিদ্ধান্তেই তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল? ’

ওই কর্মকর্তা জানান, এসব প্রশ্নের জবাবে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের ওপর হামলাসহ কিছু অরাজক ঘটনা ঘটেছিল বলে স্বীকার করেন। তবে দলীয় হাইকমান্ড আলোচনা করে এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এই প্রশ্নের জবাবে দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, পল্টনে পুলিশের উপর হামলা, মারধোর ও গাড়ি ভাংচুরসহ অরাজক ঘটনা ঘটেছিল কিনা তার জানা নেই।  

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের কাছে সংরক্ষিত ১৭ ফেব্রুয়ারির হামলা ও পুলিশকে মারধোরের দৃশ্য সম্বলিত কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ তাদের দেখানো হয়। ভিডিও ফুটেজে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে তারা দলের কোন পর্যায়ের নেতৃত্বে আছেন তা জানতে চাওয়া হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিল্লুর রহমান জানান, সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়, তেমন আচরণ করেই কৌশলে এ দুই জামায়াত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৩৭ নম্বর মামলায় গত বুধবার আদালতে রিমান্ড আবেদনে একথা স্পষ্টভাবে বলা হয় যে,আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই ‘পল্টনের অরাজকতা’য় অংশ নেন।

পরে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও ওই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে এসব প্রতিবেদনে ইঙ্গিত রয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো বলেন, পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নেপথ্য ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আর কিছু জানাতে রাজি হননিএসআই জিল্লুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম বলেন, “উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে খুবই সতর্কতার সঙ্গে মুজাহিদ ও সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ”

 জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় কোনো রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারেও কর্মকর্তারা নজর রাখছেন।
 
এসআরআর/ বাংলাদেশের স্থানীয় সময় : ১৪ঃ০১ ঘন্ট/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।