ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার আগে সমীক্ষা দাবি বিএনপির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১০
ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার আগে সমীক্ষা দাবি বিএনপির

ঢাকা: ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার আগে এ বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর আবেদন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার দলটির পক্ষে এ দাবি জানান।



সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের জন্য ফি নেওয়া হবে না বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে এমকে আনোয়ারের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় ফি আদায় না করে ট্রানজিট দেওয়া হলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এমকে আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘ভারতকে তার সেভেন সিস্টারস (পূর্বাঞ্চলীয় সাত প্রদেশ) যাওয়ার জন্য ১২শ’ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে হয়। ট্রানজিট চুক্তির পর তাদের এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে না, সময় বেঁচে যাবে সাত দিন। সে হিসেবে তাদের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে। নীতিগতভাবে এ অর্থের পুরো দাবিদার বাংলাদেশ। এছাড়া সেভেন সিস্টারস এর সঙ্গে বাংলাদেশের যে রপ্তানি বাণিজ্য ছিলো ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নের পর সেই বাণিজ্যের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং ফি ছাড়া ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন হবে, তেমনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পড়বে হুমকির মুখে। ’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুয়ায়ী ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট থেকে সার্ভিস ফি ও শুল্ক আদায়ের সুযোগ আছে। কিন্তু সরকার ভারতের চাপে এগুলো ছাড়াই ট্রানজিট সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বিশেষ করে অর্থনীতিবিদরা শুরু থেকেই বলে আসছেন-ট্রানজিট দিলে বছরে ২/৩ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। এখন তারা কোথায়? ফি ও শুল্ক ছাড়া এই আয় কিভাবে হবে তা তারা এখন ব্যাখ্যা করুক। ’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পণ্য যাবে তাদের অঙ্গরাজ্যে। অথচ আমরা ফি পাবো না। এতে কি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে?’

এমকে আনোয়ার বলেন, ‘আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন-ট্রানজিটের বিরোধীতা যারা করে তারা বোকা। কিন্তু আমি আপনাকে বোকা বলবো না। শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনার যে  জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তা কোন দেশের বা কাদের স্বার্থে ব্যয় করছেন?’

ট্রানজিট কান্ট্রি বলতে বিশ্বে কিছু আছে কি না তা ব্যাখ্যা করার জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানান এমকে আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে অবকাঠামোগত দিক সেটা ভারতের ব্যবহারের উপযোগী করতে ২৪ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এ টাকা কোত্থেকে আসবে?’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমীক্ষা চালিয়ে যদি দেখা যায় যে ট্রানজিট চুক্তিতে আমাদের দেশের লাভ হচ্ছে তাহলে বিরোধী দল হিসেবে আমরা তা ভেবে দেখবো। ’

ক্ষমতায় গেলে ট্রানজিট চুক্তি বাতিল করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তি বাতিল করা সহজ না। এটা জটিল প্রক্রিয়া। হয়তো কিছু কিছু জায়গা সংশোধন করা যায়। কিন্তু বাতিল করা যায় না। ’

ট্রানজিটবিরোধী ইস্যুতে বিরোধী দলের কর্মসূচি যথার্থ কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের কর্মসূচি যথার্থ কি না সে বিচার করবে জনগণ। ’

এমকে আনোয়ার বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীর্গ) নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রতি দিয়েছিল। সেসবের মধ্যে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট ছিলো না। কিন্তু এখন তারা সেগুলোই বাস্তবায়ন করছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তাদের আগ্রহ নেই। ’

তিনি আরো বলেন, ‘মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময়ে ভারতের চাপে এ চুক্তিগুলো করতে বাধ্য হন। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালেও ভারতের পক্ষ থেকে এরকম চাপ ছিল। কিন্তু দেশের স্বার্থে আমরা ভারতের কাছে মাথা নত করিনি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪,২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।