ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

মহাজোট ছাড়ছেন এরশাদ!

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১০
মহাজোট ছাড়ছেন এরশাদ!

ঢাকা: সরকারি দলের সঙ্গে থেকেও চাওয়া পাওয়ার হিসাব না মেলাতে পেরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে কোনো মুহূর্তে মহাজোট ছাড়তে পারেন এমন গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। এ নিয়ে কথা চালাচালিও শুরু হয়েছে।

 

গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে রাতে বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রবীন এক নেতা বারিধারায় একটি বিদেশি দূতাবাসে বৈঠক করেছেন। তারা কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তা জানা না গেলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সুর্ম্পক স্থাপনের জন্যই ওই বৈঠক হয়েছে বলে একটি সুত্র জানায়।

গোয়েন্দা সূত্রেও ওই বৈঠকের খবরটি নিশ্চিত করা গেছে।

আগামী বছর মার্চের দিকে এরশাদ মহাজোট ছাড়তে পারেন বলেও খবর আছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে।

এদিকে এরশাদের মহাজোট ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। গত সপ্তাহে নতুন করে হাওয়া লাগে ওই গুঞ্জনের পালে। গত মঙ্গলবার এক সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার তার বক্তব্যে বলেন, ‘রাজনীতিতে কে কোথায় যাবে তা ভবিষ্যাৎ বলে দেবে। ’

ওই বক্তব্যের পর এরশাদের মহাজোট ছাড়ার সম্ভাবনা আরো প্রবল হয়ে ওঠে।

বিশস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় গিয়ে জাতীয় পার্টির এক শীর্ষ নেতা বৈঠক করছেন এমন খবর পেয়েই দুপুরে সেখানে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ। তবে সেখানে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ফিরে যায় তারা।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে মঙ্গলবার মধ্যরাতেও। গুলশানে বিএনপি  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অফিস ঘিরে ফেলে র‌্যাব-পুলিশ। একটি গোয়েন্দা সংস্থার খবরের ভিত্তিতেই র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সেখানে যায় বলে বাংলানিউজকে জানান এক উর্দ্ধতন একটি সংস্থার কর্মকর্তা।

তিনি বলেছেন, ‘গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জাতীয়পার্টির এক শীর্ষ নেতা বৈঠক করছেন বলে খবর ছিলো একটি সংস্থার কাছে। ’

সত্যিই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির কোন নেতা গিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। ’

এরশাদ বা জাতীয় পার্টির কোন নেতার সঙ্গে বৈঠক বা যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের কাছে যে ভুল ইনফরমেশন ছিল তাতো বোঝাই যায়। তা না হলে আমার বাসায় সাদা পোশাকের পুলিশ এলো কেনো? কেনো আমি গোপন বৈঠক করবো? এখানে গোপন করার কি আছে? আমি রাজনীতি করি। আমার বাসায় লোক আসাই তো স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় লোক আসে না?’ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের লোক আসে। আমার কাছে আসা কি অপরাধ !

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্যানিক তৈরির জন্যই সরকার এটা করেছে। ’

জাতীয়পার্টির সিনিয়র এক নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করছেন এমন খবরে পুলিশ আসতে পারে কি না জানতে চাইলে  মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরকম গুজব শুনে যদি এসে থাকে তাহলে এই সরকার কিসের উপর ভিত্তি করে দেশ চালাবে? কেউ যদি গোপনে কিছূ করে সে বিএনপি অফিসে আসবে কেন ? বৈঠক করার ঢাকা শহরে জায়গার কি অভাব আছে?’

এরশাদ বিএনপি’র সাথে জোট করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে কে কোথায় যাবে বা থাকবে। ’

এদিকে মহাজোটে বঞ্চিত এরশাদের রাজনৈতিক পক্ষ ত্যাগের খবর নিছকই গুজব, নাকি সত্যি সত্যিই তিনি খালেদা জিয়ার বিএনপির সঙ্গে নতুন মেরুকরণে যেতে চাইছেন তা বুঝতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বোদ্ধা ও বিশিষ্ট জনরা।

উল্লেখ্য মহাজোট সরকার গঠন করলেও এরশাদ রাষ্ট্রপতি হতে পারে নি। এ কারণে তিনি প্রথমে একটু অখুশি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেপ্রাচ্যর বিশেষ দুত করা হচ্ছে এ খবর শুনে এরশাদের অভিমান কিছুটা হলেও ভাঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ঐ পদও পাননি তিনি। এতে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরেন এরশাদ। এর কয়েকদিন পর শুরু হয় তার  ভাই জিএম কাদেরের মন্ত্রণালয় নিয়ে সমস্যা।

সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাইলটদের দ্বন্দ্ব ও তার জের ধরে বিমান পরিচালনা ভেঙ্গে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তার সমাধান হলেও পুরো ঘটনায় সাইড লাইনে ছিলেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী জিএম কাদের।  

আর এসব নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের মধ্যেই মহাজোট বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

নতুন করে যোগ হয় ৭ম সংশোধনী ইস্যু। শুধু জেল থেকে বাঁচতেই এরশাদ দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এত কিছুর পরেও বিপদ থেকে মুক্ত হননি তিনি।

এই প্রবীণ সাবেক রাষ্ট্রপতি ৭৮ বছর বয়সে এসে জেলে যাওয়ার ভয়ে তাকে দুর্বল করে ফেলেছে। সবকিছূ মিলিয়ে এ দলটি শেষ পর্যন্ত মহাজোট ছেড়ে যেতে পারে এ আশঙ্কা রাজনীতিক বোদ্ধাদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।