ঢাকা: গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা বিচারিক আদালতে চলবে বলে দেওয়া হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার (১০ মে) প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার পক্ষে এ আপিল করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাটি বাতিলে প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে গত বছরের ০৫ আগস্ট সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার ওই রিট আবেদন ছাড়াও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায়ে বলা হয়, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে। একইসঙ্গে এই মামলায় রায় পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয় খালেদাকে। পূর্ণাঙ্গ রায় বিচারিক আদালতে যাওয়ার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৩ এপ্রিলের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল তাকে।
এ নির্দেশনা অনুসারে গত ৫ এপ্রিল ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় জামিন নেন খালেদা জিয়া।
ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে (প্রয়াত) আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলায় গ্যাটকোকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকা ক্ষতির অভিযোগ করা হয়।
২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়া ও সাবেক ছয় মন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এর আগে-পরে চার্জশিটভুক্ত আসামি খালেদা জিয়াসহ আসামিদের কয়েকজন ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
এর মধ্যে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এসব আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন। পরে বেশ কয়েক দফায় মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাড়ান আদালত।
বেশ কয়েক বছর স্থগিত থাকার পর গত বছর মামলা সচল করতে রুল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক।
এরপর গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান।
গত বছরের ১৭ জুন শুনানি শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) করেন আদালত।
খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা অন্য দুই দুর্নীতির মামলা নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দু’টির রুলের রায়েও মামলা চলবে বলে গত বছর পৃথক পৃথক ভাবে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এসব মামলাও হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৬
ইএস/এএসআর