ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বাংলানিউজকে ফখরুল

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন চিন্তাও করবে না সরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
বিএনপি ছাড়া নির্বাচন চিন্তাও করবে না সরকার ছবি: বাদল

ঢাকা: বিএনপি ছাড়া আরেকটি নির্বাচন দেওয়ার কথা চিন্তাও করবে না সরকার। নিজেদের প্রয়োজনেই সব দলকে সঙ্গে নিয়ে একটা ইনক্লিউসিভ নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে তারা।

বিএনপিকে বাদ দিয়ে পর পর দু’টি নির্বাচন করার মতো অপরিণামদর্শী আওয়ামী লীগ নয়।
 
উত্তরার বাসা ‘কুসুমিত’তে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাংক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া বিএনপির বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আগামীর নেতৃত্ব, বিগত দিনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, জিয়াউর রহমানের বিএনপি গঠন ও বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
 
স্বাক্ষাৎকার নেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। ছবি তুলেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
 
বাংলানিউজ: আপনি এমন এক সময় বিএনপির মহাসচিব হলেন, যখন দলটি ভীষণ চাপে আছে- বিষয়টি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এটা ঠিক- বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিভিন্ন নীতির কারণে বিএনপি এখন সব চেয়ে কঠিন সময় পার করছে।

বাংলানিউজ: বিষয়টি একটু ব্যাখা করুন
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপির মূল লিডারশীপ বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রায় ১৬টি মামলার আসামি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যে মামলা হয়েছিল, সেগুলোর ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এখন নতুন করে নাশকতার মামলা দেওয়া হচ্ছে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। তার বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা আছে। স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য ছাড়া সবার বিরুদ্ধেই মামলা আছে। এর পর ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে মামলা আছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই আমাকে বিএনপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলানিউজ: কেন্দ্রীয় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে আসছে?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা আশা করছি ঈদের আগেই হয়ে যাবে। বেগম জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছে কাউন্সিল। উনি একা করছেন- এই জন্য সময় লাগছে। মাঝখানে রোজা পড়ে গেল। আমরা আশা করছি ঈদের আগেই হয়ে যাবে।
 
বাংলানিউজ: প্রতি রমজানে বিএনপির চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ নেতারা ঈদের পর ‘কঠোর’ কর্মসূচির কথা বলেন। এবার তেমনটি বলছেন না। ঈদের পর কী করবে বিএনপি?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমদের এখন মূল কাজ হচ্ছে দল পুনর্গঠন করা। সেন্ট্রাল কমিটি হয়ে যাচ্ছে। যেসব জেলায় কমিটি হয়নি- সেসব জেলায় কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে। অঙ্গ সংগঠনগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে-সেগুলোও পুনর্গঠন করতে হবে। এটা করতে আরো ৩/৪ মাস সময় লাগবে। এর পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
 
বাংলানিউজ: ২০১১ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন। আগামীর আন্দোলনও কি ওই একই দাবিতে হবে?  
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমাদের দাবি একেবারে সিম্পল। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার একটা ইলেকশন। যে ইলেকশনে গভ:র্মেন্ট কোনো ইন্টারফেয়ার করবে না। ম্যানুপলিং করবে না। অর্থাৎ সরকার থাকবে, কিন্তু তার প্রভাব থাকবে না। আমরা অতীতে এটা করে আসছি। অর্থাৎ ওই সময়টা একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার। আমাদের সংবিধানে এটা ছিল। এই সরকার সেটা চেঞ্জ করেছে। এটা আবার সংবিধানে নিয়ে এলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
 
বাংলানিউজ: আলোচনার জন্য সরকারকে টেবিলে বসার কথা বলছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন কী?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন কীভাবে হবে-সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য টেবিল ডিসকাসের কথা বলেছি। বসার পর তারা একটা অপশন দেবে, আমরা একটা অপশন দেব। আমরা বলব-এভাবে করলে ভাল হয়, তারা বলবেন ওভাবে করলে ভাল হয়। কিন্তু তারা বসবেনই না, তাহলে হবে কীভাবে?
 
বাংলানিউজ: পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল হয়েছে। এটা ফিরিয়ে আনতে হলে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। সংসদে তো আপনাদের কোনো প্রতিনিধিত্বই নেই। বাইরে বসে কী হবে?  
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: কেন হবে না। আপনি তো চেঞ্জ করেছেন। এখন তো বসতে হবে এই জন্যই যে, কী করে এটি ঠিক করা যায়। ক্রাইসিসটা কোথায়। ক্রাইসিস ইজ সিস্টেম অব ইলেকশন। সেই সিস্টেম অব ইলেকশন নিয়ে আপনি আলোচনা করেন না কেন?
 
বাংলানিউজ: ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছিল?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আওয়ামী লীগের একমাত্র বক্তব্য ছিল, তোমরা মুভমেন্ট উড্রো কর। এই আন্দোলন বন্ধ কর। আমরা বলেছিলাম, ঠিক আছে আমরা বন্ধ করব। ইলেকশনেও যাবো। তোমরা ইলেকশন সিডউল ৭ দিন পেছাও। কীভাবে ইলেকশন নিউট্রাল করা যায়-তা নিয়ে এই ৭ দিন  আলোচনা হোক। কিন্তু উনারা ইলেকশন পেছালেন না। তখন তো আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
 
বাংলানিউজ: ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এরই মধ্যে আড়াই বছর কেটে গেছে। সরকারও তার জায়গায় ঠিক মতই আছে। অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো কি বিএনপির সঙ্গে আর যোগাযোগ করেছেন? অথবা বিএনপি তারানকোর সঙ্গে?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: ইলেকশনের পরই জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন; তোমরা ইমিডিয়েটলি সমঝোতার জন্য বস। ডিসকাস ফর ফ্রি-ফেয়ার এন্ড ইনক্লিউসিভ ইলেকশন। দ্যাট ইলেকশন ওয়াজ নট ইনক্লিউসিভ। ইমিডিয়েটলি গো টু এ ডায়ালগ ফর অ্যান ইনক্লিউসিভ ইলেকশন। এর পর ২০১৫ সালে তারানকোকে স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল ফর ডায়লগ টু অপজিশন। কিন্তু গর্ভমেন্ট সেটা রিফিউজ করল। এখন পর্যন্ত তারানকো ওই জায়গাতেই আছেন। তার অ্যাসাইনমেন্টও আছে।
 
বাংলানিউজ: কিন্তু তার কথা না শুনলে বিএনপি সেক্ষেত্রে কী করবে?

 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সরকার বাধ্য হবে, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিএনপিকে ছাড়া আরেকটি নির্বাচন দেওয়ার কথা চিন্তাও করবে না তারা। নিজেদের প্রয়োজনেই সব দলকে সঙ্গে নিয়ে একটা ইনক্লিউসিভ নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে তারা। কারণ, পৃথিবীর কোনো সরকারই নিজেদেরকে ডিক্টেটরস হিসেবে দেখতে চায় না। তাছাড়া সরকার প্রচণ্ড রকম চাপে রয়েছে। যারা তাদেরকে ফান্ডিং করে, পয়সা দেয় তারা একটা ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন চাইছে। আর সাধারণ জনগণ তো বলছেই। সুতরাং বিএনপিকে বাদ দিয়ে পর পর দু’টি নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে- এতোটা অপরিণামদর্শী তারা নয়।

বাংলানিউজ: আপনারা বলছেন, দেশে গুপ্ত হত্যা, খুন, গুম আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এর নেপথ্য কারণটা কী?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হওয়া। এখন তো সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নেই। কাউকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।
বাংলানিউজ: ২০০১-২০০৬ সালে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। তখনও তো জঙ্গিবাদের উত্থান ও সিরিজ বোমা হামলা হয়েছে।
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: জঙ্গিবাদ তখন কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে। বিচার হয়েছে। তা ছাড়া ২০০১-২০০৬ এই সময় ভেরি ইফেক্টিভ একটা পার্লামেন্ট ছিল। আওয়ামী ওই পার্লামেন্টে ভোকালপার্ট ছিল। সব বিষয় সেখানে আলোচনা হত। এখন তো জবাবদিহিতা নেই। পার্লামেন্টে এগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না।
 
বাংলানিউজ:আপনাদের আমলে বিরোধী দলের নেতার সমাবেশ গ্রেনেড হামলা হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: গ্রেনেড হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। কোনো ধারাবাহিকতা থেকে এটি আসেনি। এটা একটা সন্ত্রাসী ঘটনা। একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একটা মিটিংয়ে হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ থেকে আমরা দেখছি- একটি বিরোধী দলকে নি:চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।
 
বাংলানিউজ: সাগঠনিক দুর্বলতা ও নিজেদের ভুলের কারণেই বিএনপি পেরে উঠছে না- মার খাচ্ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এখন তো ভাই আমাদের হাতে কিছু নেই। এই কিছু না থাকাকে কি সাংগঠনিক দুর্বলতা বলা য‍াবে?  

বাংলানিউজ: বলা হয়ে থাকে, সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অথবা প্রাণের ভয়ে জিয়াউর রহমানের দলে  অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন।
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন পিষ্টতার ছিল না। তার সমারিক শাসন ছিল ওই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমাদৃত। মজার ব্যাপার হলো- সামরিক শাসন কিন্তু জিয়াউর রহমান দেননি। দিয়েছিলেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ।
 
বাংলানিউজ: খন্দকার মোস্তাক বেশিদিন ছিলেন না। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন তুলে নেন নি কেন?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  ওই মুহূর্তে শামরিক শাসন তুলে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। সামরিক শাসনের মধ্য থেকেই এক দলীয় শাসন তুলে দিয়ে উনি চলে আসছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের দিকে।
 
বাংলানিউজ: জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, প্রথম রাষ্ট্রপতি-বিষয়গুলো আপনারাই তো আমদানি করেছেন?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: 
পলিটিক্সে এ ব্যাপার গুলো খুব গৌণ। মুখ্য বিষয় হলো-আপনি জাতিকে কি দিচ্ছেন? জাতিকে গড়ে তোলার জন্য, উপরে নিয়ে আসার জন্য কী করছেন- সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কবে কার জন্মদিন হলো, কবে হলো না। কাকে কি ঘোষণা করল, কাকে করল না- এগুলো কিছু না।   পন্ডিত জহরলাল নেহেরু, মহাত্মা গান্ধি, মোহম্মদ আলী জিন্নার জন্মদিন কবে, সেটা নিয়ে কিন্তু আমরা কথা বলি না। উনারা কি দিয়ে গেছেন- সেটাই মুখ্য বিষয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সব চেয়ে বড় কন্ট্রিবিউশন ছিল তিনি একটা জাতি তৈরি করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন-এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। পলিটিক্সে কন্ট্রিবিউশনটাই মুখ্য।
 
বাংলানিউজ: বাবা ছিলেন মুসলীম লীগার। ছাত্র জীবনে করেছেন বাম রাজনীতি। আর এখন ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের মহাসচিব-বিষয়গুলোকে মেলান কীভাবে?
 
 মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  আমি এখানে খুব পরিষ্কার করে একটা কথা বলতে চাই। বিএনপির গঠনতন্ত্রের কোথাও ইসলামী মূল্যবোধ কথাটি লেখা নেই। আছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। সকল ধর্মের মূল্যবোধ। এই কথাটা বলেই প্রতিপক্ষ আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। এটা হচ্ছে একটা কূটকৌশল। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমরা ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, হিন্দু ধর্মের মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, খ্রিস্ট ধর্মের মূল্যবোধে বিশ্বাস করি।
 
বাংলানিউজ: ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসে আপনার ব্যক্তিগত দর্শনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না?

 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগ করেছেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ করেছ্নে। তার পর আওয়ামী লীগ করেছেন। একইভাবে আমার বাবাও মুসলীম লীগ করেছেন। আমি ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে মিশেছি। পরবর্তীকালে মনে হয়েছে, বিএনপির রাজনীতি হলো সঠিক রাজনীতি। এ রাজনীতির ভেতর দিয়ে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারব, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
 
বাংলানিউজ: বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি বলা হচ্ছে তারেক রহমানকে। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থানরত তারেক রহমান প্রয়োজনের মুহূর্তে হঠাৎ দেশে ফিরে দলের হাল ধরতে পারবেন কী?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: প্রথমত সব কিছুই নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতার উপর। উনি এখন আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে উনিই দায়িত্ব পালন করবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি এখন অসুস্থ। এই সরকার তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে। তিনি যাতে রাজনীতিতে আসতে না পারেন, তার জন্য সব ব্যবস্থা পাকা করেছে সরকার। সুতরাং অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতিই বলে দেবে, কী করা হবে, কী করা হবে না।
 
বাংলানিউজ: টানা ৯০ দিনের আন্দোলন। তারপর হঠাৎ আন্দোলন থেকে সরে আসা। এর পর আর কোনো আন্দোলন নেই। তাহলে কি ওই আন্দোলন থেকে কোনো শিক্ষা নিয়েছে বিএনপি?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:
রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন কেন করে? একটা লক্ষ্য অর্জন করার জন্যই তো। তিন মাসের যে আন্দোলন, তা কেন হয়েছে? একটা অনৈতিক সরকার এক বছরের মধ্যে যখন আলোচনা শুরু করল না, তখন আমাদেরকে আন্দোলনে যেতে হলো। -হ্যাঁ আন্দোলনে আমরা সফল হতে পারি নাই। তার মানে এই নয়, আমরা সফল হব না।
 
বাংলানিউজ: আন্দোলনে নজীরবিহীন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। পেট্রোলবোমায় মারা গেছে অসংখ্য মানুষ। রাতের আঁধারে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  পেট্রোলবোমার ঘটনা সম্পূর্ণ এজেন্ট দিয়ে ঘটানো হয়েছে। আর রেল লাইন উপড়ে ফেলেছে সাধারণ জনগণ। একটা মুভমেন্ট যখন চলতে থাকে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের ইকুয়েশন থাকে। আন্দোলন সফল করার জন্য কর্মীরা কে কোথায় কী করছে-তা বলা মুশকিল। আন্দোলনের সময় সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
 
বাংলানিউজ: কিন্তু সহিংস আন্দোলনের জন্য জোট শরিক জামায়াতকেই বেশি দায়ি করা হয়।
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এটি মোটেই ঠিক নয়। বেশির ভাগ ঘটনা সরকার দলীয় লোকজন ঘটিয়েছে। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্যই তাদের এই অপচেষ্টা।
 
বাংলানিউজ:
আপনাকে ধন্যবাদ

 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর:  ধন্যবাদ
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।