ঢাকা: ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি।
বরং বাড়ি ফেরার তাগিদ অন্যদের চেয়ে তাদের একটু বেশিই। কারণ, যে মানুষদের সমর্থনে ও ভোটে তারা সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন, তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা অবশ্য কর্তব্য বৈকি!
তাই, বছরের বেশির ভাগ সময় রাজধানীতে অবস্থান করলেও এরই মধ্যে অনেকেই ছুটে গেছেন এলাকায়। যারা যাননি, এখন ছুটছেন তারা। আবার কূটনীতিক, বিশিষ্টজন ও সর্বসাধারণের জন্য দলীয় প্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে থাকতে হবে কোনো কোনো নেতাকে। কেউবা ঢাকায় ঈদ করে পরের দিন যাবেন গ্রামে। আবার সুদূর প্রবাসে থাকা ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে অনেকেই যাচ্ছেন দেশের বাইরে।
তবে যে যেখানেই ঈদ করুন না কেন-সবারই চেষ্টা থাকে বছরের বিশেষ এই দিনটি আনন্দের মধ্য দিয়ে পার করতে।
কিন্তু গত কয়েক বছর বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের কাটছে নিরানন্দ ঈদ। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দলটির চেয়াপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বেশির ভাগ নেতা রয়েছেন কোনো না কোনো ঝামেলায়।
মামলা-মোকদ্দমা, কারাবাস, গুটিয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্যে, গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন, হুলিয়া তো আছেই সঙ্গে যোগ হয়েছে জাতীয় কাউন্সিলের পর কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ার যন্ত্রণা। দলটির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ আবার প্রিয় সন্তান ও নিকট আত্মীয় হারানোর ব্যথা নিয়ে পার করবেন এবারের ঈদ। নিখোঁজ নেতাদের পরিবারে এবারের ঈদ আননন্দ সেভাবে উঁকি দেবে না।
প্রিয় সন্তান আরাফাত রহমান কোকোকে হারানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় ঈদ। সুতরাং এবারের ঈদের দিনটা খু্ব আনন্দের হবে না তার জন্য। অশ্রুসিক্ত দিন পার করতে হবে তাকে।
তারপরও মাতৃত্ববোধকে কিছু সময়ের জন্য চেপে রেখে নেতৃত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। বেলা সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে তার শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া। এরপর দুপুর পৌনে ১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত বিশিষ্ট নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিয়ম করবেন তিনি।
বিগত বছরগুলোতে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও গত বছর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন খালেদা জিয়া। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অদুরেই শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন তিনি।
এরপর বনানী কবর স্থানে যাবেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করতে। জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।
আট বছর ধরে ইংল্যান্ডে ঘরোয়া পরিবেশে ঈদ উদযাপন করে আসছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবারও তার ঈদ কাটবে সেখানেই।
একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) অস্ট্রেলিয়া গেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাই এবার দেশে ঈদ করা হচ্ছে না তার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ ও মির্জা আব্বাস ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের নামাজ শেষে তারা সবাই খালেদা জিয়ার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ড. আব্দুল মঈন খান এ মুহুর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং নজরুল ইসলাম খান আছেন সৌদি আরবে। স্থায়ী কমিটির এ দুই সদস্য‘র ঈদ দেশের বাইরে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য, শামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, সারোয়ারি রহমান ভীষণ অসুস্থ। এই চার প্রবীণ নেতার ঈদ ঢাকাতেই হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের ঈদ হাসপাতালেই কাটবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন। ৭ জুলাই বর্ষীয়াণ এই নেতার সহর্ধমিণীর মৃত্যুবার্ষিকী। সুতরাং এদিন ঈদ হলে দিনটা তার কাছে হবে অন্য রকম।
এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তাদের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৬
এজেড/বিএস