ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপি জোটের ‘টোকাই ইরান’!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
বিএনপি জোটের ‘টোকাই ইরান’!

ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ‘টোকাই ইরান’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।

জোটের প্রধান দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন নেতাও তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঠিক এই শব্দটিই ব্যবহার করলেন।

ইরানকে নিম্ন রুচির হাভাতে ‘হাতপাতা’ স্বভাবের বলেও তকমা দিলেন এই নেতা।  

নামস্বর্বস্ব দলটি পরিচালনার নামে জামায়াতসহ আরও দুই-একটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তির কাছে হাতপেতেই চলে ইরানের। আর এ কারণে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা তাকে ‘টোকাই ইরান’ নামে ডাকেন।

জোটের ভেতরে থেকে ইরানের অতি জামায়াতপ্রীতিও শরিকদের মধ্যে অস্বস্তির কারণ।

নেতৃত্বের সকল গুন বর্জিত ইরান  নানা ছলে-বলে-কৌশলে লেবার পার্টির দায়িত্ব নেন সে ইতিহাস সবার জানা। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ দলই হয়ে ওঠে তার ব্যক্তিগত আয়ের একমাত্র অবলম্বন।  

যার সিংহভাগ আসছে স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর  কাছ থেকে।
 
নিজ অফিস থেকে বিতাড়িত জামায়াত ইরানকে টাকা দিয়ে তার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ নেয়।  

‍২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের পর বন্ধ করে দেওয়া হয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কার্যালয়। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের ব্যাপারে সরকার হার্ড লাইনে থাকায় গত পাঁচ বছরেও রাজধানীর মগবাজার ও পুরনো পল্টনে থাকা কার্যালয় দু’টিতে যাওয়া-আসা নেই তাদের।  

এ অবস্থায় রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত তাদের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজছিল। ঠিক তখনই সুযোগটি নিয়ে নেন জামায়াত ঘেষা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়টি জামায়াতের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ছেড়ে দেন তিনি।  
 
বিনিময়ে অফিস ভাড়া বাবদ মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ডা. ইরানকে দিয়ে আসছিল জামায়াত। পুরানা পল্টনের একটি বহুতল ভবনের আলিশান ফ্ল্যাটেই লেবার পার্টির সাইনবোর্ডের আড়ালে জামায়াতের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো।  
 
কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভবন মালিক ইরানকে ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর কমলাপুরে একটি বাসা ভাড়া করে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন ইরান। কিন্তু সেখানেও বেশি দিন টিকতে পারেননি। জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে ৪/৫ মাসের মাথায় এ অফিসটিও ছাড়তে হয় তাকে।  
 
বর্তমানে নয়াপল্টনের একটি পুরনো ভবনে ছোট একটি কক্ষ ভাড়া করে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন ইরান।  
 
জানা গেছে, এই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক এরইমধ্যে ইরানকে অফিস ছাড়ার জন্য মৌখিক নোটিশ দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, জামায়াতের কোনো এজেন্টকে ঘরভাড়া  দেবেন না।
 
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে ফোন দিলে প্রথমে রিসিভ করেননি, পরে রিসিভ করলেও ‘ব্যস্ত আছি’ বলে কেটে দেন।  
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নেতৃ্ত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর একটা স্ট্যাটাস রয়েছে। কিন্তু এই ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের রাজনৈতিক দলের কোনও স্ট্যাটাস নেই। বরং এখন ‘টোকাই’ নাম নিয়ে জোটের অস্বস্তির বড় কারণ হয়ে উঠেছেন তিনি।  

জোটের অন্য দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির দাদা মশিউর রহমান যাদু মিয়া ছিলেন জিউয়ার রমানের মন্ত্রীসভার সিনিয়র সদস্য। গানির বাবা শফিকুল গানি স্বপন ছিলেন জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রীসভার সদস্য।
 
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জু ছিলেন জাতীয় জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব। বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন । গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকবার। সিটি করপোরেশনের মেয়রও ছিলেন তিনি।

কিন্তু ২০ দলীয় জোটের এসব এলিট শরিকরাও রোজায় ফাইভ স্টার হোটেল ভাড়া করে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন না।  তবে নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রতিবছরই তা করে থাকেন।  

এর-ওর কাছ থেকে টাকা যোগাড় করে প্রতি বছর নামকরা হোটেল-রেস্তোরাঁর বড় হল রুম ভাড়া করে খালেদা জিয়ার সম্মানে ইফতার মাহফিল আয়োজন করাই যার অন্যতম রাজনৈতিক কর্মসূচি। ওইসব ইফতার মাহফিলে এক পাশে খালেদা জিয়া আরেক পাশে জামায়াত নেতাদের বসিয়ে ফটোস্যুট করেন ইরান। আর সেটা দেখিয়ে এর ওর কাছ থেকে টাকা নেন, হাত পাতেন টোকাই ইরান।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এজেড/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।