ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সিসিসি নির্বাচন: উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে

ন্যাশনাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১০

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলছে। ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।

নগরীর ভোটাররা আজ একজন মেয়র, ৪১জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১৪জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন।

ভোট দিয়েছেন মহিউদ্দিন, মঞ্জু

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই তার নিজ এলাকার ৮ নং শোলকবহর সরকারি আহমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

ভোটদান শেষে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি প্রতিনিধিকে মেয়রপ্রার্থী মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, সুষ্ঠু ভাবেই ভোটগ্রাহণ হচ্ছে। ফলাফল যাই হোক না কেন, মেনে নেব। ’

অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম তার নিজ এলাকা উত্তর কাট্টলি হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সকাল সাড়ে নয়টায়।  

ভোট বুথ থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে যে কোনও ফলাফলই মেনে নেবো। ’

নোমানের অভিযোগ

উত্তর আগ্রাবাদের হাজিপাড়া কেন্দ্রে মহিলা বুথে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সকালেই অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমান। মঞ্জুর আলমের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে এসে তিনি এ অভিযোগ করেন। এছাড়াও সন্না পাড়ার মুন কমিউনিটি সেন্টারে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকা ভোটার তালিকা ও পোলিং এজেন্টদের ভোটার তালিকার মধ্যে অমিল পাওয়া গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।  

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট

দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হচ্ছে। মহানগরীর জামালখান ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে এ ব্যবস্থায় ভোটগ্রহণ চলছে। নতুন প্রযুক্তিতে যদি কেউ ভোট দিতে না চান তবে ব্যালটে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি বুথে এক ঘন্টায় ১২০টি ভোট নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আজ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়. সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারিগণ এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে এ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ৪১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের জন্য ২৪৮ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের জন্য ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কাগজে কলমে আটজন প্রার্থী থাকলেও সাতজন নির্বাচন অংশ নিয়েছেন। শেষ মুর্হূতে জাতীয় পার্টিার সোলায়মান আলম শেঠ সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অন্য মেয়র প্রার্থী হলেনÑ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম মনজু, জানে আলম, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া এবং রফিকুল আলম।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানা যায়, এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের ৪৫২টি ভোটার এলাকায় ৬৭৪টি কেন্দ্র করেছে। মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৪৮টি। অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৬০টি।

ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটারের সংখ্যা ৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডে। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৫৮ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৫৮ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার। সবচেয়ে বেশি ভোট রয়েছে দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৯ জন ভোটার রয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬২ হাজার ২৭৫ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৬২ হাজার ৪৪ জন।

এছাড়া দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ২৬ হাজার ২৮০ জন, জালালাবাদ ওয়ার্ডে ৮৫ হাজার ৪১৭ জন, পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে ৪৩ হাজার ৭৩৩ জন, চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ৬৫ হাজার ২২২ জন, মোহরা ওয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৬০৯ জন, পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ১৭ হাজার ৬৮০ জন, পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ৭৬ হাজার ৭০২ জন, শুলকবহর ওয়ার্ডে ৭৪ হাজার ৭৫০ জন, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৫৪ হাজার ৯১৯ জন, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৮৯৪ জন, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৩৯২ জন, সরাইপাড়া ওয়ার্ডে ৪৭ হাজার ৭০০ জন, পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৪৭ হাজার ৩৮৮ জন, লালখানবাজার ওয়ার্ডে ৪২ হাজার ৩২ জন, বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ৩১ হাজার ১৮৫ জন, চকবাজার ওয়ার্ডে ২৬ হাজার ৬২৭ জন, দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার ৮০৩ জন, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৪৪ হাজার ৩৮২ জন, পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্র্ডে ২৯ হাজার ৯২৮ জন, দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ১৯ হাজার ৬১৮ জন, জামালখান ওয়ার্ডে ২৫ হাজার ৩২৫ জন, এনায়েতবাজার ওয়ার্ডে ২০ হাজার ৭০৪ জন, উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ২০ হাজার ৯৮২ জন, আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ৮৩ হাজার৭৭৪ জন, রামপুর ওয়ার্ডে ৩৩ হাজার ৬০৬ জন, উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৭ জন, দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ৪২ হাজার ৭৯৩ জন, পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার ৩১৫ জন, পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ডে ২৭ হাজার ৫০ জন, পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৮১০ জন, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ১৫ হাজার ৮৬৪ জন, ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে ১৮ হাজার ৩৮৪ জন, পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ২১ হাজার ৫৯১ জন, বকশিরহাট ওয়ার্ডে ১৮ হাজার ৬০৫ জন, গোসাইলডাংগা ওয়ার্ডে ৩০ হাজার ৭৬৭ জন, উত্তর মধ্যম ওয়ার্ডে ২৫ হাজার ৭২৬ জন, দক্ষিণ মধ্যম ওয়ার্ডে ৮৪ হাজার ৭২১ জন, উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৪২ হাজার ৯৪৫ জন এবং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ২৭ হাজার ৭৩ জন ভোটার রয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বিডিআরের ২ কোম্পানি সদস্য, ১০ হাজার পুলিশ, ২ হাজার আনসার এবং ১ হাজার র‌্যাব সদস্য। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন ৬ কোম্পানি সেনা সদস্য। তারা ৪১টি ওয়ার্ডের ৬৭৩টি কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সেনা সদস্যরা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে টহল দিচ্ছেন।

এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৬৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২১ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে ৪১টি ভিজিল্যান্স টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ১২ জন বিচারক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব, পুলিশ, বিডিআরের পাশাপাশি আমর্ড পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরাও কাজ করছেন।

নির্বাচন কমিশনের ৪১ জন প্রথমশ্রেণীর কর্মকর্তা ৪১টি ওয়ার্ডে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা কোনো ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনকে ভোটগ্রহণ বন্ধের সুপারিশ করতে পারবেন। রাজনৈতিক দলগুলো চায় না বলে এ নির্বাচনে কোনো দেশী পর্যবেক্ষক রাখা হয়নি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১০
আরডিজি/এইচএস/বিকে/একে/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।