ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

সিসিসি নির্বাচন:ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

শান্তিপূর্ণ ভোটে উপস্থিতি কম, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ বিএনপির

ন্যাশনাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১০

চট্টগ্রাম : বড় ধরনের কোনো গোলোযোগ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। চলছে ভোট গণনা।



সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। নগরীর ভোটাররা একজন মেয়র, ৪১জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১৪জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনী এলাকায় আজ ছিল সাধারণ ছুটি।

মেয়র পদে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এম মনজুর আলম উভয়ই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আবহাওয়া ভাল থাকা সত্ত্বেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো কম। নির্বাচনে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। টানা ৩ দিন (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) ছুটির সুযোগে অনেকেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। এ কারণে ভোটারের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

তবে তরুণ ভোটাররা ই-ভোটিং বেশি পছন্দ করায় কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রিজাইডিং অফিসাররা।

ভোটার তালিকায় গড়মিল এবং ছবি ও ভোটার নম্বরের সামঞ্জস্য না থাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বিঘিœত হয়। সিটি কর্পোরেশন ও নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার মধ্যে মিল না থাকায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে জানিয়েছেন।

এদিকে, বেলা ৩টার দিকে নগরীর দামপাড়ায় তার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্ররোচিত করার অভিযোগে পুলিশ পোলিং অফিসার তপন কান্তি বড়–য়াকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

ভোট দিয়েছেন মহিউদ্দিন, মঞ্জু

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই তার নিজ এলাকার ৮ নং শোলকবহর সরকারি আহমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী মনজুর আলম তার নিজ এলাকা উত্তর কাট্টলি হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন সকাল সাড়ে ৯টায়।  

নোমানের অভিযোগ

সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাগিনার বিরুদ্ধে পুলিশের সহায়তায় ভোটারদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল নোমান। তবে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি প্রতিনিধিকে নোমান বলেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নাসিরাবাদ বালক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভোটারদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেন মেয়রের ভাগিনা মামুন। ’

নোমান জানান, এসময় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ মামুনকে সহায়তা করে।

এছাড়া উত্তর আগ্রাবাদের হাজিপাড়া কেন্দ্রে মহিলা বুথে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে সকালেই অভিযোগ করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। এছাড়াও অপর একটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের ভোটার তালিকার মধ্যে অমিল পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।  

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট
দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হয়েছে। মহানগরীর জামালখান ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে এ ব্যবস্থায় ভোটগ্রহণ করা হয়। নতুন প্রযুক্তিতে কেউ ভোট দিতে অনিচ্ছুকদের জন্য বিকল্প হিসেবে ব্যালট পেপারও প্রস্তুত ছিল।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ৪১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৪৮ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তবে শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ মনজুর আলম মনজু ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন জানে আলম, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া এবং রফিকুল আলম।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জন এবং মহিলা ভোটার ৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৬৭৪টি। অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০টি। ৬৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন বিডিআরের ২ কোম্পানি সদস্য, ১০ হাজার পুলিশ, ২ হাজার আনসার এবং ১ হাজার র‌্যাব সদস্য। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন ৬ কোম্পানি সেনা সদস্য। এছাড়া আমর্ড পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে ৪১টি ভিজিল্যান্স টিম কাজ করে। পাশাপাশি ১২ জন বিচারক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের ৪১ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১০
আরডিজি/এইচএস/বিকে/একে/এমএমকে/এএইচএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।