ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সিসিসি নির্বাচন: ৫৮০টি কেন্দ্রে ৮৮ হাজার ভোটে এগিয়ে মনজুর, দুপুর সাড়ে তিনটায় ফল ঘোষণা

রমেন দাশগুপ্ত/হাজেরা শিউলি/শামীম খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১০
সিসিসি নির্বাচন: ৫৮০টি কেন্দ্রে ৮৮ হাজার ভোটে এগিয়ে মনজুর, দুপুর সাড়ে তিনটায় ফল ঘোষণা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন(সিসিসি) নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৮৮ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চট্রগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের মেয়র প্রাথী মোহাম্মদ মনজুর আলম। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬৭৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮০টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়।

এতে আনারস প্রতীক নিয়ে মনজুর আলম ৪ লাখ ৬ হাজার ৫২০ ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চট্রগ্রাম নাগরিক আন্দোলনের প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী জাহাজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ লাখ ১৮হাজার ৩১৯ ভোট।

দুপুর সাড়ে ৩টায় পুরো ফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী।  

আজ ভোর ৬টার দিকে মনজুর আলম নির্বাচনী তথ্য কেন্দ্রে আসেন। বিজয় অনেকটা নিশ্চিত জেনে তিনি এসময় সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আমি বিজয় মিছিল করবো না, দোয়া মাহফিল করবো। মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার বড় ভাই। সিসিসি’র উন্নয়নে তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি কাজ করবো। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই। ’

এসময় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’কে বলেন, চট্টগ্রামবাসী উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চেয়েছে। আর সে কারণেই পরিবর্তন এসেছে। ’

মহিউদ্দিন চৌধুরী নির্বাচনের এ ফল মেনে নেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিজয় নিশ্চিত হলেও নির্বাচনের সবকিছুই যে সঠিকভাবে হয়েছে সে কথা মানতে নারাজ বিএনপি নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খশরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয় হয়েছে তবে সেজন্য অনেক অনিয়ম, অশুভ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।

মনজুর আলমের নির্বাচনী প্রচার অভিযানের প্রধান সমন্বকারী এই নেতা বলেন, আজ দিনটি খুবই আনন্দের। আশা করি মহিউদ্দিন চৌধুরী এ ফল মেনে নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

নিজ কেন্দ্রেও হেরে গেছেন মহিউদ্দিন

নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায় মেয়র প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরী তার নিজ কেন্দ্রেও মনজুর আলমের চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রে তার প্রাপ্ত ভোট ৫৭১, অন্যদিকে  মঞ্জুর পেয়েছেন ৬৬৬ভোট। অপরদিকে মঞ্জুর আলম নিজ কেন্দ্রেও বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ১৬২৮ ভোট পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৪৪৯।

রাতভর বিক্ষোভ

নির্বাচনের ফল দ্রুত ঘোষণার দাবিতে মনজুর আলমের সমর্থকরা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিক্ষোভ ভাঙ্চুর করেছেন। তারা চট্রগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রকে ঘিরে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় এক র‌্যাব কর্মকর্তাসহ আহত হয় ৭/৮জন পুলিশ সদস্য। পরে মনজুর সমর্থকদের বিক্ষোভ নগরীর কাজীর দেউড়ি ও টাইগারপাস এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙ্চুর ও কিছু দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে মনজুর- মহিউদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়।

এদিকে, ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিুব্ধ কর্মীরাও রাতে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙ্চুর করেছে।

ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ

বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মধ্যরাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-য়ে  সিসিসি নির্বাচনের ফল কোনো রকম কারচুপি হলে তার পরিনতি ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশে ‘ডিজিটাল কারচুপি’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সরকারের নির্দেশে কাজ করছে।

প্রকৃত ফল দ্রুত ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

রাত আড়াইটার দিকে ফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে ছেড়ে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। এ সময় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের মধ্যে থাকা চার দলীয় জোট সরকারের দালালেরা তাকে হারানোর চক্রান্ত করছে।    

শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ

কিছু ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ চলে। নগরীর ভোটাররা একজন মেয়র, ৪১জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১৪জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভোটার তালিকায় গড়মিল এবং ছবি ও ভোটার নম্বরের সামঞ্জস্য না থাকায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বিঘিœত হয়। সিটি কর্পোরেশন ও নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার মধ্যে মিল না থাকায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে জানান।

এদিকে, বেলা ৩টার দিকে নগরীর দামপাড়ায় তার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্ররোচিত করার অভিযোগে পুলিশ পোলিং অফিসার তপন কান্তি বড়–য়াকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

মুল প্রার্থী দু’জনই

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ৪১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৪৮ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তবে শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ মনজুর আলম মনজু ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন জানে আলম, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া এবং রফিকুল আলম।

দিনভর অভিযোগ

সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাগিনার বিরুদ্ধে পুলিশের সহায়তায় ভোটারদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল নোমান। তবে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা এই অভিযোগ নাকচ করে দেন।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে নোমান বলেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নাসিরাবাদ বালক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ভোটারদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাগিনা মামুন। ’ নোমান জানান, এসময় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ মামুনকে সহায়তা করে।

এছাড়া উত্তর আগ্রাবাদের হাজিপাড়া কেন্দ্রে মহিলা বুথে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে সকালেই অভিযোগ করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। এছাড়াও বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেয়র প্রাথর্ িমনজুর নিজেও তার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া না দেওয়ার অভিযোগ করেন।

ই- ভোটিং মেশিনে ভোট

দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হয়। মহানগরীর জামালখান ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে এ ব্যবস্থায় ভোটগ্রহণ করা হয়। নতুন প্রযুক্তিতে কেউ ভোট দিতে অনিচ্ছুকদের জন্য বিকল্প হিসেবে ব্যালট পেপারও প্রস্তুত ছিল।

ভোটার ও ভোটকেন্দ্র

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৩ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৫২ জন এবং মহিলা ভোটার ৮ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৬৭৪টি। অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০টি। ৬৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশন।

নিরাপত্তা ও প্রশাসন

নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন বিডিআরের ২ কোম্পানি সদস্য, ১০ হাজার পুলিশ, ২ হাজার আনসার এবং ১ হাজার র‌্যাব সদস্য। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন ৬ কোম্পানি সেনা সদস্য। এছাড়া আমর্ড পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে ৪১টি ভিজিল্যান্স টিম কাজ করে। পাশাপাশি ১২ জন বিচারক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের ৪১ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১০
আরডিজি/এইচএস/এসকে/ এএইচএস/বিকে/একে/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad