আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। ইশতেহারে কি কি বিষয় তুলে ধরা হবে, সেগুলো নিয়ে নিজের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
তারা জানান, প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইশতেহারে নতুন কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। যেমন ব্লু-ইকোনোমি (সমুদ্র অর্থনীতি) ও এনার্জি (জ্বালানি) সেক্টরের উন্নয়ন এবং শিক্ষিত যুবসমাজকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলা করে জয় পায় বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমার অধিকারী হয়েছে। এ সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণে সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ উত্তোলন ও দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোকে ব্লু-ইকোনমি (সমুদ্র অর্থনীতি) বলা হচ্ছে। সমুদ্র অর্থনীতিকে কিভাবে কাজে লাগানো হবে, সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ আহরণে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে- সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।
দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুবসমাজ। শিক্ষিত যুবকদের কাজে লাগানোর বিষয়েও ইশতেহারে দিক-নির্দেশনা থাকবে। এছাড়া জ্বালানি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এ খাতের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে ইশতেহারে ঘোষণা থাকবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নির্বাচনী ইশতেহার দেয় আওয়ামী লীগ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এবং ২০২১ সালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের ঘোষণা দিয়ে ইশতেহারে সরকারের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
নেতারা মনে করছেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে নিশ্চিত করতে ইশতেহারের এ ‘ভিশন-২০২১’ চমক, পরিকল্পনা-প্রতিশ্রুতি ও দিক-নির্দেশনা বড় ভূমিকা রাখে। ক্ষমতায় আসার পর গত মেয়াদে ও বর্তমান মেয়াদকালে ভিশন-২০২১কে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকার ওই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুসারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সক্ষম হয়েছে।
নেতারা জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। অনুরূপভাবে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এ এসডিজি নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপগুলোর দিক-নির্দেশনা আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে।
ওই নেতারা আরও জানান, নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরতে বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যেই দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত আমলা, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা এ ইশতেহার তৈরির কাজ করবেন। তাদের সঙ্গে দলের নেতারাও থাকবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার অগ্রসর হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে প্রাধান্য দিয়ে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপযোগী আগামী নির্বাচনী ইশতেহার হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইশতেহার তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। সাধারণত নির্বাচনের ২/৩ মাস আগে ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। সেভাবেই ইশতেহার তৈরির কাজও শেষ করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যের আলোকে সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আগামী ইশতেহার দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
এসকে/এএসআর