শনিবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচন সহায়ক সরকার: সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে নাগরিক ফোরাম।
নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও ড. এস এম হাসান তালুকদার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা সাইফুর রহমান মিহির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মওদুদ আহমদ বলেন. ‘অত্যন্ত দুঃখ লাগে, ভিশন-২০৩০ তখনো শেষ করেননি বা শেষ করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিলেন, এটি অন্তঃসারশূন্য। যারা বলেছেন, তারা নিজেরাই অন্তঃসারশূন্য। তারা যদি সত্যিকার অর্থে গঠনমূলক রাজনৈতিক দল হয়ে থাকে, তাহলে ভিশন-২০৩০ কে অভিনন্দন জানাতো। ভয়ের কিছু নেই। এটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারতো’।
‘গত ৪০ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের চিত্র তুলে ধরে নাই। তাদের এ প্রতিক্রিয়া ঠিক হয়নি। এটি পড়ে দেখে সুনির্দিষ্টভাবে বলা উচিত ছিলো। বিষয় ঠিক করে, কোন বিষয়ে আমরা সঠিক বলিনি। তাহলে ভালো হতো’।
ভিশন ২০৩০ তে সমঝোতার কথার ব্যাখ্যায় মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সমঝোতার কথা বলি রাজনীতির কারণে, কৌশলের কারণে। কিন্তু এর উত্তর আসতে হবে রাস্তায়, মাঠে। আন্দোলন ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। এবং এটি আদায় করা হবে’।
‘আমরা সুস্থ গণতন্ত্র সহায়ক সরকারের কথা বলি। সে সহায়ক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বলেন, নির্দলীয় বলেন আর যাই বলেন না কেন, আমরা এমন একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, যে সরকারের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নির্বাচনে থাকবে না। নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি হস্তক্ষেপ থাকবে না। আমরা এটির আলাদা রুপরেখা দেবো। মনে করবেন না, আমরা বসে আছি। আমরা বলবো, কিভাবে এ সহায়ক সরকার গঠন করা যাবে। যে সরকারের অধীনে দেশের সকল মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন’।
গত কয়েক বছরে সব হারিয়েছি মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কতো বছর হয়ে গেলো, ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১০ বছর। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আমাদের দলের কোনো নেতার পক্ষে কোনো সাবস্ট্রাক্টিভ জাজমেন্ট আমরা পাইনি। বরং দেখেছি, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে কতোবার হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, আপিল বিভাগে তা স্থগিত হয়েছে, কতোবার তারিখ পাল্টেছেন। আর একটা দিনও যদি মান্নাকে বেশি কারাগারে রাখা যায়, তাহলেই বোধহয় বিরাট কিছু।
‘আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিষয়েও একই জিনিস। ড. মোশাররফ হোসেন চারবার জামিন পেয়েও বের হতে পারেননি। বিরোধী দলের নেতা বলে তাকে জেল খাটতে হয়েছে’।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি ভিশন-২০৩০ দেওয়ার পর মানুষের আলাপ-আলোচনায় যা বুঝেছি, তাতে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের মধ্যে কাঁপুনি ধরেছে’।
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনতো করবোই। বিএনপি নির্বাচন করবে। তবে এই সরকার তথা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে না। যে নির্বাচন হবে, সেটি ২০১৪ সালের মতো নয়। পরিবর্তন অনিবার্য। সামনের দিনগুলো আমাদের’।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সিদ্ধান্ত বিএনপিকে নিতে হবে। বেশিরভাগ ভূমিকা বিএনপির লাগবে। নির্বাচন সহায়ক সরকার বলেন আর যাই বলেন রুপরেখা আপনাদেরকেই(বিএনপি) দিতে হবে। লড়াইয়ে থাকতে হবে, আবার সমঝোতার কথাও বলতে হবে। এখন আপনারা আন্দোলন করবেন, নাকি সমঝোতা করবেন- সেটিও আপনাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সহায়ক সরকারের কথা বলেন- তাহলে সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিতে পারবেন না। তাই আন্দোলন এবং সমঝোতা দু’টি নিয়েই ভাবতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে সত্য কথা বলতে হবে। পুতু পুতু করে কোনো কাজ হবে না। এসব সেমিনার দিয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। নিজের শক্তি খুঁজে বের করতে হবে। আমি চাই, বিএনপি রাস্তায় নামুক’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর