বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) খালেদার আবেদনে দুই মামলারই পরবর্তী শুনানির এ দিন ধার্য করেন রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে এ আদালতে।
দু’টি মামলায়ই প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অসমাপ্ত লিখিত বক্তব্য পাঠ ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বক্তব্য উপস্থাপন শুরুর কথা ছিল।
তবে আদালতে হাজির হয়ে আগামী ঈদ পর্যন্ত দু’টি মামলায়ই শুনানির দিন পেছাতে সময়ের আবেদন জানান খালেদা। অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় সাক্ষী রি-কলেরও (ফের জেরা) আবেদন জানান। এছাড়া মামলার বিষয়ে তার একটি আবেদনের শুনানির দিন আগামী ০৩ জুলাই ধার্য রয়েছে উচ্চ আদালতে বলে উল্লেখ করা হয় আবেদনে।
আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
পরে আদালত খালেদার আবেদন মঞ্জুর করে আদালত অরফানেজ মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের পুন:জেরার আদেশ দিলে তাকে আংশিক জেরা করে সময়ের আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা।
আগামী ১৫ জুন অসমাপ্ত জেরা ও চ্যারিটেবলে অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
চ্যারিটেবলে গত বছরের ০১ ডিসেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে শুরু করেন খালেদা। কিন্তু ওইদিন বক্তব্য শেষ না হওয়ায় সময় চান তিনি। এরপর কয়েক দফায় আদালতে না গিয়ে সময় বাড়িয়ে নেন। অন্যদিকে উচ্চ আদালতে নানা আবেদন ও অসুস্থতার কথা বলে বেশ কয়েকবার পিছিয়ে নিয়েছেন অরফানেজে আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অন্যদিকে অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বিদেশে থাকা তারেক রহমানকেও পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
এ মামলায়ও সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
২০১০ সালের ০৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ০৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭
এমআই/এএসআর
** দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন পেছাতে খালেদার আবেদন